শেকড়ের দাগ
মহসীন হাবিব
মোয়াজ্জেম সাহেব মনে মনে তার ছেলের জন্য অপেক্ষা করছেন। কাল সকালে তিনি সাত দিনের জন্য চিল্লায় যাবেন। সুবেহ সাদিকে রওয়ানা হবেন। এবার যাচ্ছেন কুমিল্লার চান্দিনায়। নোমানের সঙ্গে একটু সময় নিয়ে আলাপ করা দরকার। তিনি মনে মনে একটু ভয়ও পাচ্ছেন। এবারের চিল্লায় যাওয়াটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। এই তো গত দশ-বারো দিন আগে তিনি বগুড়া থেকে এলেন। প্রায় পনের দিন ছিলেন। নোমান যদি বলে, আব্বার কি মাথা খারাপ হল? এই তো চিল্লা থেকে আসলেন। মোয়াজ্জেম সাহেব শুনেছেন চিল্লায় যাওয়া একটা নেশার মতো। তার কি দিনে দিনে চিল্লার নেশা হচ্ছে?
তিনি এসব ভাবছিলেন। ঘরে ঢুকলেন নোমানের মা। চিল্লায় যাওয়ার ব্যাপারে তিনিও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন। তাই সকাল থেকেই তিনি নোমানের মায়ের সঙ্গে নরম সুরে কথা বলছেন। একটু আধটু চিল্লার উপকারিতা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। এখন ঢুকতে দেখে বললেন, ‘কই, চা খাওয়াবা না? আর শুন, এখন কিন্তু আমার হাঁপানি নাই, চায়ের ভেতরে আবার তেলাপোকা দিয়ো না কিন্তু, হে হে হে।’
আফিয়া বেগম হেসে বললেন, ‘যে পরিমাণ তেলাপোকা আপনাকে দিয়েছি, তাতে তো তেলাপোকা খাওয়ার নেশা হওয়ার কথা!’
বলতে বলতে তিনি থেমে গেলেন। কান সজাগ করে বাইরের দিকে শুনলেন, ‘চিৎকার করে কে? আহারে, আবার কার কি হল!’
মোয়াজ্জেম সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘কী ব্যাপার সন্টুর গলা মনে হচ্ছে?’
বলতে বলতেই ঝড়ের বেগে সন্টু এসে ঘরে ঢুকল। সে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদছে। কী বলছে কিছুই বোঝা যায় না।
বার বার জিজ্ঞেস করে আফিয়া বেগম নিজের কানকে বিশ্বাস করলেন না! তার কানে পৌছল, ‘নোমান ভাইরে কোপাইছে!’
চিৎকার দিয়ে তিনি ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। রাস্তায় নেমে তিনি দিশেহারার মতো যেদিকে পা যায় দৌড়াতে থাকলেন। কোথায়, কী ঘটেছে তিনি কিচ্ছ জানেন না। চারপাশে মানুষ জড়ো হতে শুরু করেছে। কারা যেন জোর করে তাকে ধরে রাখতে চাইছে। তিনি জ্ঞান হারানোর ঠিক আগে দেখলেন নোমানের আব্বা মোয়াজ্জেম সাহেব হাউমাউ করে কাঁদছেন। তার দু’হাত ওপরের দিকে তুলে ধরে আছেন।