সৈয়দ শামসুল হকের ‘গুপ্ত জীবন, প্রকাশ্য মৃত্যু’ (২০০৪) শুকুর মোহাম্মদের কাহিনী। লেখক ব্যতিক্রমী ভঙ্গিতে কাহিনীর সূচনা করেছেন। উপন্যাসে নিম্নবর্গের শুকুর মোহাম্মদের উচ্চবর্গে গোত্রান্তরের ঘটনায় অনেক বাঁক পরিলক্ষিত হয়। জলেশ্বরী যে উপকথার স্বর্ণখণ্ড, তা বোঝা যায় শুকুরের আকস্মিক সাত ঘড়া স্বর্ণ-রুপার কলসপ্রাপ্তির মধ্যে। ৬০ বছরের বেশি জীবনের বাস্তবতায় উত্থান-পতনে শুকুর পাপ-পুণ্যের যে বোধে উপনীত হয়, তাতে আধুনিক মানুষের মনোদৈহিক যন্ত্রণা অভিব্যক্ত। শ্রেণী পরিবর্তনের ফলে শুকুরের মানসচেতনার দ্বন্দ্ব-জটিল মুহূর্তগুলো উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ প্রান্ত।
জন্মের মুহূর্তে মাতৃবিয়োগ ও বাল্যে পিতৃমৃত্যু এতিম করে দেয় মাঝিপুত্র শুকুর মোহাম্মদকে। বসুনিয়াদের ছেলে বন্ধু হাফেজ তাকে তাদের গৃহে আশ্রয় জুটিয়ে দিলেও সেই আশ্রয় শিগগিরই হারাতে হয় দুই বন্ধুর রেল স্টেশন-সংলগ্ন পতিতাপল্লিতে যাওয়ার ঘটনা গৃহকর্তা জানতে পারার পর। তবে বসুনিয়াদের গৃহে অবস্থান করে হাইস্কুল পর্যন্ত অধ্যয়নের সুযোগ ঘটে তার। এরপর হস্তীবাড়ির কাজীর আশ্রয়ে রাত্রিযাপনের সময় ডাকাতির ঘটনায় সেও অভিযুক্ত হয়ে তিনবছর জেল খেটে বের হয়। সত্য ও সরল জীবনের অবসান ঘটে তার। জলেশ্বরীতে ফিরে নিজেকে অপরাধী মনে করে নিভৃতে অবস্থানের মধ্যে বাল্যবন্ধু হাফেজের আশ্রয় প্রত্যাখ্যান করে সে। ‘পোড়-খাওয়া নতুন মানুষ সে এখন।’ তাকে আরো পরীক্ষায় অবতীর্ণ করার জন্য শাহ সৈয়দ কুতুবুদ্দিনের মাজারে শুকুরের আশ্রয় নেওয়া ও কিছুদিন পর বিতাড়িত হওয়ার ঘটনা প্রাসঙ্গিক। খাদেমের দৃষ্টিতে তার অপরাধ বর্ণনা করেছেন ঔপন্যাসিক : ‘হারামজাদা! ফজরে আসিয়া দেখি হারামজাদা মাজারের পাশে নিদ্রায় কাতর। কিন্তু তার চ্যাটখানা লোহার মতো খাড়া! তাম্বুর মতো উঁচা হয়া আছে। তারপর থরথর করি খানিক কাঁপিয়া রস উগলি দিলো। ভিজি গেইলো লুঙ্গির মাথা। আমার চক্ষের সামনে। চিন্তা করি দ্যাখো মাজারের পাশে তার কুচিন্তা।’ নিম্নবর্গের চরিত্রের স্বতঃস্ফূর্ত আত্মপ্রকাশে এ ঘটনার গুরুত্ব আছে। কারণ তাদের প্রবৃত্তির স্বাভাবিক প্রকাশই অনিবার্য। এরপর জলেশ্বরী স্টেশনের কুলি সর্দার বছরদ্দির স্নেহদৃষ্টি পেয়ে কুলিগিরি করা এবং দুর্ঘটনায় আকস্মিক বছরদ্দির মৃত্যু ও তার কন্যা খোশবাসীকে বিয়ে উপন্যাসের কাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ বাঁক বদলের জন্য অনিবার্য হয়ে ওঠে। ‘ভাগ্যই তাকে ঘাট থেকে ঘাটে নিয়ে যায়। নদী যখন অকূল, তখন নদীই তাকে ঘাটে টেনে নিয়ে যায়।’ সে আল্লার লীলাখেলার কার্যকারণ বিশ্লেষণ করে। সে হাফেজের সঙ্গে সমকামিতায় উলঙ্গ হয়েছে, বাপকে মেরে তাকে এতিম করে ছেড়েছে। মন্দপাড়ায় গিয়েছে, বসুনিয়ার আশ্রয় কেড়ে নিয়েছে। লুঙ্গি খারাপ হয়ে গিয়েছিল মাজারের পাশে। বেদম জুতাপেটা আর অপমান জুটেছে। হস্তীবাড়ির ডাকাতির ঘটনায় তার তিনবছর কেড়ে নিয়েছে। বছরদ্দির মেয়েকে
বিয়ের পর শাশুড়ির সর্প দংশনে মৃত্যু পুনরায় তাকে সস্ত্রীক পথে নামিয়েছে। স্ত্রীর অর্থে আধকোশা নদীর তীরে বসতির সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। ভাগ্যের ষড়যন্ত্রে নদীতীরে বসতি ও পাড়ে মল ত্যাগের মুহূর্তে একদিন তার সামনে নদী ভাঙনে মাটির নিচ থেকে গুপ্তধন বের হয়। গুপ্তধন হস্তগত হলে স্ত্রীর মাধ্যমে এ সংবাদ বাইরে প্রচার পাওয়ার আশঙ্কা থেকে সে হত্যা করে খোশবাসীকে। এ সময় থেকে তার শ্রেণী পরিবর্তনের সূচনা। সে তুলসী নামে নেপালি দেহরক্ষী নিযুক্ত করে। জিপ হাঁকিয়ে ঠিকাদারিতে ব্যস্ত হয়। বাল্যবন্ধু হাফেজ মোক্তারকে নিজের অফিসের কাজে নিয়োগ দেয়। উল্লেখ্য, গুপ্তধন প্রাপ্তির বিষয়টিকে লেখক যৌক্তিক ভিত্তি দেওয়ার জন্য কুতুবুদ্দিনের সঙ্গে স্থানীয় রাজার যুদ্ধ ও ধন লুকিয়ে রাখার ইতিবৃত্ত বর্ণনা করেছেন।
শ্রেণী পরিবর্তনের পর শুকুর সাধারণ মানুষের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছে। পিতৃবন্ধু শীতল মাঝিকে খেয়াঘাটের ঘাটসর্দার করেছে। দুর্ভিক্ষ পীড়িতকে খাদ্য দিয়েছে। তার অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রকাশ দেখা যায় কালীবাড়ির মাঠে লঙ্গরখানা দেওয়ার ইচ্ছা ও কলকাতায় ছেচল্লিশের দাঙ্গায় পতিত হয়ে তার সহযাত্রী গ্রামবাসী বিভূতির হত্যাকাণ্ডের দায় নিজ কাঁধে নেওয়ার ইচ্ছে থেকে। তবে ‘টাকার পাহাড়ে আমারও কোনো সুখ নাই।’ (পৃ ৬৪) এই চেতনা তার পূর্ব থেকেই ব্যক্ত হতে দেখা যায়। অন্যদিকে হাফেজ বাল্যবন্ধু হয়েও একসময় মনে করেছে খেয়াঘাটের মাঝির ব্যাটা এখন বড় মানুষ। আর সে বসুনিয়ার ব্যাটা সেই মাঝির ব্যাটার মুখাপেক্ষী। এ ব্যক্তি একসময় মরিয়মের প্রতি শুকুরের দুর্বলতার কথা প্রচার করে ফায়দা লুটতে চেয়েছে।
স্ত্রী হত্যা-উত্তর শুকুরের আত্মযাতনার পথপরিক্রমা শুরু হয় ফিউদর দস্তয়েভস্কির ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্টে’র নায়কের অনুশোচনার মতো। জলেশ্বরীর মন্দপাড়ার রূপসী হীরা বারাঙ্গনা বুড়িরচরের বছরদ্দি কর্তৃক জনৈক পতিতাকে খুনের ঘটনা জানালে সে নিজেই নিজের মুখোমুখি দাঁড়ায়। ‘হীরার সঙ্গে রাত্রিবাস করাটাই সর্বনাশের হয়েছে বলে তার ধারণা ক্রমেই দৃঢ়মূল হতে থাকে। বিপদ একটা হবেই তার।…খোশবাসীর মৃত্যুর কথা মনে পড়ে যায়। বছরদ্দির অ্যাকসিডেন্টকে তার ছেলে যে খুন বলে শুকুরের ঘাড়ে চাপাতে চেয়েছিল সেটাও আর তার কাছে বিস্মৃত থাকে না। সবই যেন গতকালের ঘটনা। তাজা উঠে আসে।’ (পৃ ৫৭) হস্তীবাড়ির বৃদ্ধ কাজির নাতনি কলকাতার কলেজ ছাত্রী শরবতিকে বিয়ে করেও মানসিকভাবে শান্তি পায়নি সে। দাঙ্গায় শরবতির বাবা নিহত হলে তাকে শেষ পর্যন্ত শুকুরকেই বিয়ে করতে হয়। বৈবাহিক জীবনে শুকুর তার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থ হয়। লেখক মনস্তত্ত্বের গভীরে ডুব দিয়ে দেখিয়েছেন যে আত্মগ্লানিতে ব্যক্তির যৌনজীবন বিপর্যস্ত। পাপচেতনা তাকে বংশবৃদ্ধিতে ব্যর্থ করে রাখে। বরং ভৃত্য রমজানের সাহচর্যে তার স্ত্রী পুত্র প্রসব করলে সে তাকে তালাক দেয়। আর হত্যা করে রমজানকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে পালিয়ে আবার ফিরে আসে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর। গৃহের পাকা মেঝের নিচে পুঁতে রাখা সোনা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে। প্রথম স্ত্রীর নামে মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। সামাজিক
জীবন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলেও শরবতির পুত্র যুবক হাসান মোহাম্মদ তার গৃহে আশ্রয় পায়। তার বিয়ে দেয় বগুড়ার রূপসী মরিয়মের সঙ্গে। এই সূত্রে শুকুরের ট্র্যাজেডি ত্বরান্বিত হয়। অন্তর জগতের জটিল আবর্তে সে একসময় সিদ্ধান্ত নেয়, তার সব সম্পত্তি বিক্রি করে জলেশ্বরীর মানুষকে দান করবে। এজন্য সে ঘোষণা করে, হাসান তার পুত্র নয়। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় পুত্রবধূ প্রচার করে তার শ্বশুর তার দিকে কুদৃষ্টি দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত জলেশ্বরীর পাগল চেরাগ আলীর মাধ্যমে উন্মোচিত হয় হাসানের জন্ম-রহস্য। আর বৃদ্ধ শুকুর জলেশ্বরীর কৌতূহলী মানুষের কাছে পাপের ইতিহাস ব্যক্ত করে তার গুপ্ত জীবনের অবসান ঘটায়। সত্য প্রকাশের মধ্যে শুকুর প্রকৃতঅর্থে পাপ-পুণ্য, সত্য-মিথ্যার মহানাটকের পরিসমাপ্তি ঘটায়। ভেতরবাসী জীবনের যন্ত্রণায় প্রদীপ্ত হয়ে পূর্ণতা পায় সে।
২.
উপন্যাসের সূচনায় সৈয়দ শামসুল হক নিজেকে ‘গল্প-প্রবন্ধের’ লেখক বলেছেন। বলেছেন ‘প্রবন্ধিত জীবনকথার রচয়িতা’। তবে কাহিনী বুনন ও চরিত্র নির্মাণে তিনি চরিত্রের মনোজগতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন। প্লট সংগঠনে সরলতা বর্জিত হয়েছে। প্রথমে উপস্থাপিত বিবৃতিতে ঔপন্যাসিক জলেশ্বরীর উপকথার রাজ্যে আমাদের আহ্বান করেছেন। কিন্তু তিনি যে গল্প বলেছেন, তার বিস্তৃত পরিসর জুড়ে আছে বাস্তবের ঘটনাংশ। ‘ছিন্ন ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ কিভাবে কাহিনী নির্মাণ করেছে সে সম্পর্কে লেখকের বয়ান :
‘এই কাহিনী শুকুর মোহাম্মদের। এই কাহিনী তার গরিব থেকে বড় লোক হয়ে ওঠার। এই কাহিনী তার পুত্র হাসান মোহাম্মদ ও পুত্রবধূ মরিয়মের। এই কাহিনী শুকুর মোহাম্মদের ভৃত্য রমজানের। আর এই কাহিনী শুকুর মোহাম্মদের প্রথম স্ত্রী খোশবাসী ও দ্বিতীয় স্ত্রী শরবতিরও। কাহিনীতে উঁকি দেয় শুকুর মোহাম্মদের আবাল্য বন্ধু হাফেজ মোক্তার। কাহিনীর ভেতরে অট্টহাস্য করে রমজানের বড় ভাই চেরাগ আলী। কাহিনীর এক প্রস্থ শেকড়ে কুড়ালের কোপ মারে কুতুবুদ্দিনের মাজারের খাদেম সৈয়দ আবদুস সুলতান। এই কাহিনী ঈদগার মাঠে শুকুর মোহাম্মদের সেজদায় যাবার।’ কাহিনীর সূচনায় আলিফ মোহাম্মদ ও তার পুত্র শুকুর মোহাম্মদের অর্থকষ্ট, তারপর শুকুরের অকস্মাৎ ধন লাভ, সচ্ছলতা, বিলাসিতা, দুটি অপমৃত্যু, বিবাহ, নিষিদ্ধ সহবাস, পাপ-পুণ্য বর্ণিত। সবশেষে আছে এই জিজ্ঞাসা যে আমরা কী নিয়ে মৃত্যুর ওপারে যাই, ঈশ্বরের বিচার মাঠে কী নিয়ে আমরা দাঁড়াতে চাই। পুণ্য নিয়েই। যা অর্জনের জন্য আমাদের তাগিদ দেওয়া হয়। লেখকের ভাষায়: ‘আমরা পুণ্য অর্জন করি। কিংবা অর্জন করতে চেষ্টা করি। যাতে ওই পুণ্য আমাদের পার করে। পাপও আমরা করি। পাপীর চেয়ে আর কে বেশি সচেতন পাপ সম্পর্কে? পৃথিবীতে আমাদের পাপ রেখে কেবল পুণ্যই হাতে নিয়ে সেই মহামাঠে দাঁড়াবার আশা করি আমরা। এই কাহিনীতে একজন সেটি লয়েও প্রশ্ন তোলে।’ এই প্রশ্ন তোলার চরিত্রটি শুকুর স্বয়ং।
উপন্যাসের কাহিনীর স্থান পূর্ববঙ্গের জলেশ্বরীতে। তবে লেখক কাহিনীকে কলকাতায় স্থানান্তর করেছেন। ঢাকা, দিনাজপুর, রংপুর ও বগুড়া এসেছে চরিত্রের প্রাসঙ্গিকতা সূত্রে। শুকুরের কাহিনীর সূচনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিছু আগে। তার পরিণতি এরশাদের পতন পর্ব পর্যন্ত প্রলম্বিত। এর মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, মন্বন্তর, দাঙ্গা, দেশ ভাগ, একাত্তর এবং এরশাদের শাসন পর্ব ব্যক্ত হয়েছে শুকুর কাহিনীর পরিপ্রেক্ষিত হিসেবে। তবে ভাষা আন্দোলনের প্রসঙ্গ উল্লেখ হয়নি কাহিনীতে। আখ্যান বিন্যাসে দীর্ঘ সময় নির্বাচনের কারণ শুকুরের বাল্যকাল থেকে বৃদ্ধ বয়সের পরিধি অঙ্কনের মধ্যে অভিব্যক্ত। উপন্যাসের কাহিনী উত্তম পুরুষের ‘আমি’ দিয়ে শুরু হলেও শুকুরের পিতার কাহিনীর সূচনা থেকে শুকুরের দীর্ঘ জীবন-ইতিহাস উপস্থাপিত হয়েছে সর্বজ্ঞ লেখকের দৃষ্টিকোণ থেকে। তবে উপন্যাসের শেষ পর্বে মরিয়ম কর্তৃক তার শ্বশুর সম্পর্কে অভিযোগ ব্যক্ত হওয়া থেকে পুনরায় উত্তম পুরুষের রীতি ফিরে এসেছে। উপন্যাসের কাহিনী বর্ণনায় সৈয়দ শামসুল হক ভাষায় যেমন গীতমূর্ছনা এনেছেন, তেমনি চিত্রকল্প ও ম্যাজিক রিয়ালিজমের ব্যবহার আছে কাহিনীর অন্তর্বুননে। কাহিনীর সূচনায় আলিফ মোহাম্মদের নদী ভাঙনে মৃত্যুর আগ মুহূর্তের বর্ণনায় আছে তার প্রয়াত স্ত্রী নছিমনের আগমন ও কথোপকথনের বিবরণ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে খেয়াঘাটের মাঝি আলিফের অসুস্থতার মধ্যে লেখকের অতি বাস্তব বর্ণনা লক্ষ করা যায়। কাহিনীর শেষে পথচলার লাঠি হাতে বৃদ্ধ শুকুর প্রসঙ্গে উত্তম পুরুষের দৃষ্টিকোণ প্রযুক্ত হতে দেখা যায়। এখানেও চিত্রকল্পের অবারিত উৎসারণ- ‘আমরা চোখ তুলে দেখতে পাই, আমাদের মাথার ওপর পাখিদের প্রশস্ত একটি স্রোত কালো নদীর মতো প্রবাহিত হয়ে চলেছে। বৃক্ষরাও মিছিলে যোগ দিতে চায়। কিন্তু তাদের পা মাটিতে প্রোথিত। তাই যেন বৃক্ষের পল্লবে বিলাপ ওঠে। বাতাস তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিলাপ করে ওঠে। বৃক্ষের ডালগুলো সাঁতারের ভঙ্গিতে বাতাসে প্রবাহিত হয়ে যত দূর পর্যন্ত শুকুর মোহাম্মদকে অনুসরণ করতে পারে, করে।’(পৃ. ১০৫)
মূলত সৈয়দ শামসুল হক ‘গুপ্ত জীবন, প্রকাশ্য মৃত্যু’ উপন্যাসে নিম্নবর্গ জীবনের ধর্মীয় চেতনার গল্প বলেছেন, বলেছেন তার হঠাৎ বড়লোক হওয়ার ঘটনা। আর নিম্নবর্গ যে অপরাধ করে আত্মযাতনায় জীবনের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে তাও দেখিয়েছেন। পাপবোধের অনুশোচনায় কাতর মানুষের চিত্র অঙ্কন করা হয়েছে কাহিনীতে। তিনি নির্মাণ করেছেন ভালো-মন্দে মেশানো চরিত্র। মানবজীবনের ট্র্যাজেডি দেখানোর জন্যই যেন লেখকের এত আয়োজন। পরিপ্রেক্ষিতে দেশ, কাল ও বাস্তবতা তাঁর সাম্প্রতিক কবিতার মতো প্রত্যক্ষভাবে উপস্থাপিত। তবে চরিত্রের অন্তর জগৎ উন্মোচনই তাঁর মূল লক্ষ্য। আর এদিক থেকে তিনি আগে প্রকাশিত অনেক উপন্যাসের মতো এখানেও পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন।