হামীম কামরুল হকের জন্ম ১৯৭৩ সালের ২২ জানুয়ারি। ছোটবেলা কেটেছে চট্টগ্রামে। তখন চট্টগ্রামের সেইলার্স কলোনিতে থাকতেন। ১৯৮৯ সালে সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৯১ সালে উচ্চমাধ্যমিক করে ১৯৯২-৯৩ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলা একাডেমীর সংকলন উপবিভাগে সহকারী সম্পাদক পদে কর্মরত। বাংলাদেশি নভেলস-এর পক্ষে ২০১৩ সালে আমরা তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি।
প্রশ্ন: বিশ্ব ভালবাসা দিবসের শুভেচ্ছা।
হামীম কামরুল হক: ধন্যবাদ। আপনাকে ফাল্গুনের শুভেচ্ছা।
প্রশ্ন: অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৩-তে আপনার কী কী বই প্রকাশিত হয়েছে বা হতে যাচ্ছে।
হামীম কামরুল হক: রোদেলা প্রকাশনী থেকে এবার আমার একটি বই-ই প্রকাশিত হয়েছে। এটি ছোটগল্প সংকলন। নাম- ‘শূন্যপরান ও অন্যান্য গল্প’।
প্রশ্ন: গ্রন্থটি সম্পর্কে জানতে চাই।
হামীম কামরুল হক: গ্রন্থটিতে তেরটি ছোটগল্প আছে। নিজের বই সম্পর্কে কিছু বলা সত্যিই মুশকিল। আমি কী লিখেছি কেমন লিখেছি তা পাঠকরাই বলবেন। আমি যেটুকু বলি তা হয়, এর বেশ কয়েকটি গল্পের পটভূমি দেশবিদেশ মিলিয়ে। কিছু গল্প মধ্যম-পুরুষে লেখা। কিছু আছে নারীর মুখ থেকে বলা গল্প। এগুলো যদিও অভিনব কিছু নয়, কিন্তু আমার জন্য নতুন। বিভিন্ন সিকুয়েন্স নিয়ে বিভিন্ন গল্প। বেশিরভাগ গল্পের কেন্দ্রটা বাস্তবধর্মী, কিন্তু পরিধিটা কাল্পনিক।
প্রশ্ন: এসব গল্পে পাঠক বা সমাজের জন্য কোন মেসেজ আছে কি?
হামীম কামরুল হক: ঠিক মেসেজ নয়, আমি কিছু পরিস্থিতির কথা আনতে চেয়েছি। যেমন, প্রথম গল্পে বুদ্ধিজীবীদের দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা ও দায়হীনতা, তাঁদের পথভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা এবং তাঁদের আপোসহীনতারও গল্প আছে। ‘অসময়সাপেক্ষ’ একটি রাজনৈতিক গল্প কিন্তু পুরোটাই সংলাপে লেখা। যৌনতা, একাকিত্ব, আত্মপ্রতারণার মতো বিষয়গুলো এসেছে ‘প্রতিটি দুঃখের দাম দশ হাজার টাকা’, ‘সে ও তোমার গল্প’, ‘চক্কর’-এ। এমনি আরো আছে, সব কিছু একেবারে মেশানো, জীবনের প্রায় প্রতিটি পর্যায়, জন্ম, শৈশব , কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব, বার্ধক্য ও মৃত্যুর কথা। রাজনীতি ও যৌনতা আমার প্রায় প্রতি গল্পের তলে তলে কাজ করে। ফলে মেসেজ আমি দিতে চাইনি, যদি কেউ নিজের মতো পেয়ে যান তো সেটি তার ওপর নির্ভর করবে।
প্রশ্ন: আপনার প্রথম উপন্যাস সম্পর্কে বলুন।
হামীম কামরুল হক: প্রথম উপন্যাস- ‘রাত্রি এখনো যৌবনে’। এখানে সময় এবং নারীচরিত্রটিকে আমি রূপক অর্থে লায়লা নাম দিয়েছি, যার অর্থ রাত্রি। অসম্ভব সাহসী ও যৌন-আবেদনময়ী এই নারী ও স্বাধীন নামের এক যুবকের কথাবার্তায় এর কাহিনীর নানান জট ও জটিলতা তৈরি হয়ে গেছে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে উপন্যাসটি। প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালে।
প্রশ্ন: আপনার উপন্যাস নিয়ে ভাবনা জানতে চাই।
হামীম কামরুল হক: উপন্যাস হল আত্মগত মহাকাব্য। এটি গ্যেটের কথা। কারণটা বলি, মহাকাব্য তো ব্যক্তিগত হয় না। এর অবজেক্টিভিটিটাই বড়। কিন্তু উপন্যাস হল ব্যক্তির কাহিনি, আমার কাছে এর সাবজেক্টিভিটিটাই বেশি প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। মহাকাব্য আত্মগত ছিল না, আর উপন্যাস আত্মগত বলেই তা উপন্যাস, মহাকাব্যের আদলে কোনো এক ব্যক্তির জীবনবোধ ও চৈতন্য অর্জনের কথা। আমি মনে করি – উপন্যাসে দুইধরনের সিলসিলা আছে। একটি টলস্টয় সিলসিলা, অপরটি দস্তয়ভস্কি সিলসিলা। একটা হল ইতিহাস-সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতির ভেতরে ব্যক্তিকে স্থাপন করা; আরেকটি হল ব্যক্তির ভেতরে ইতিহাস-সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতির উদ্ভাস ঘটা। ইতিহাস-সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতি মতো বিষয়ে ভেতরে ব্যক্তির কথা বলতে হলে তাকে ন্যূনতম তলস্তয় হতে হয়, ওটা আমার জন্য প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। আমি ব্যক্তিকেন্দ্রীক উপন্যাস লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
প্রশ্ন: আপনার লেখালেখির শুরু সম্পর্কে জানতে চাই।
হামীম কামরুল হক: ১৯৯৭ সাল থেকে প্রবন্ধ-সমালোচনা বা ননফিকশন দিয়ে লেখালেখির শুরু। তবে গল্প, উপন্যাস লিখতে শুরু করি ২০০৫ সাল থেকে।
প্রশ্ন: আপনার কোন বইটি পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
হামীম কামরুল হক: আমার বইগুলো কতটা পাঠকের কাছে গেছে আমি ঠিক জানি না। তবে ভাষাচিত্র প্রকাশিত ‘গোপনীয়তার মালিকানা’ উপন্যাসটির দুটো ভালো রিভিউ হয়েছিল ‘উলুখাগড়া’ ও ‘বইয়ের জগৎ’-এ। এছাড়াও বেশ কয়েকজন পাঠক আমাকে বইটি পড়ে তাদের মত জানিয়েছেন।
প্রশ্ন: এবারের গ্রন্থমেলা নিয়ে আপনার ভাবনার কথা জানতে চাই।
হামীম কামরুল হক: এবারের গ্রন্থমেলা প্রকাশকদের গ্রন্থমেলা। কিন্তু এবারের মেলা আগের তুলনায় এত পরিচ্ছন্ন হলেও জমেনি। আজ চৌদ্দতম দিন চলছে। তবু জমজমাট তেমন হয়নি। এদিকে নতুন বই কম। তবে আশা করছি, খুব শীঘ্রই দর্শক-পাঠকদের পদচারণায় জমে উঠবে এই মেলা।
প্রশ্ন: ধন্যবাদ আপনাকে এতক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য।
হামীম কামরুল হক: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: রাজিউল হাসান
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ; ২ ফাল্গুন, ১৪১৯ বঙ্গাব্দ