উড়ুক্কু উপন্যাসের মাধ্যমে সাহিত্যের বড় পরিসরে আলোচিত হলেও এর আগেই তাঁর রচিত এবং প্রকাশিত পাঁচটি গল্পগ্রন্থ বোদ্ধামহলে বেশ সমাদৃত হয়। আলোচিত এই মানুষটি নাসরীন জাহান। জন্ম ১৯৬৪ সালে ময়মনসিংহে। বাংলাদেশি নভেলস-এর পক্ষে আজ আমরা তার মুখোমুখি হয়েছি। আমরা তাঁর মুখ থেকেই শুনব তাঁর কিছু কথা।
প্রশ্ন: পহেলা ফাল্গুনের শুভেচ্ছা।
নাসরীন জাহান: ঋতুরানীর শুভেচ্ছা। সবাই বসন্তকে ঋতুরাজ বলে, কিন্তু আমি বললাম ঋতুরানী। আমি মেয়ে বলে এমন বলছি না। এসময় প্রকৃতি ফুলে ফুলে সাজে, মেয়েরাও ফুলে ফুলে সাজে। তাই বসন্তকে আমি ঋতুরানী নাম দিলাম। এবং সেই সাথে শাহবাগেরও উত্তাল শুভেচ্ছা আপনাকে।
প্রশ্ন: গ্রন্থমেলা-২০১৩ প্রসঙ্গে আসি প্রথমেই। এবার আপনার প্রকাশিত গ্রন্থ সম্পর্কে বলুন?
নাসরীন জাহান: লিখেছি আসলে একটি উপন্যাস আর কয়েকটা গল্প। বই এসেছে তিনটি। অন্যপ্রকাশ থেকে কানামাছি, কোন স্বপ্নের ছুট, বেঙ্গল পাবলিশার্স থেকে ছোটগল্পের সংকলন নেচে ওঠে আদমের সাপ, প্রথমা থেকে সিসেম দুয়ার খোলো।
প্রশ্ন: আপনার আলোচিত গ্রন্থ সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
নাসরীন জাহান: আমার মোটামুটি সবগ্রন্থই পাঠক মহলে সাড়া ফেলেছে। আমার প্রথম উপন্যাস উড়–ক্কু প্রকাশের আগে প্রকাশিত পাঁচটা গল্পগ্রন্থই বোদ্ধামহলে আলোচিত হয়।
প্রশ্ন: প্রতিটা মানুষের প্রকৃতির একটা কিছু টানে। আপনার ক্ষেত্রে প্রকৃতির কোন ব্যাপারটা বেশি টানে?
নাসরীন জাহান: প্রকৃতি সবার। অবচেতনে একেক লেখকের কাছে একেকটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাকে চাঁদ, পূর্ণিমা, রাত টানে। অনেক ভক্তরা জানতে চায়, আপনার লেখায় পূর্ণিমায় এত রক্ত, এত কান্না কেন? একসময় পরিবারের মানুষদের নিয়ে পঞ্জিকা ঘেটে ঢাকার বাইওে যেতাম পূর্ণিমা দেখতে। মনে আছে, ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে আমরা ক’জন সমেস্বর নদীর তীরে পূর্ণিমা দেখতে গিয়েছিলাম। আমার জীবনে প্রথম সেবার আকাশে নয়, নদীর জলে পূর্ণিমা দেখেছি। চাঁদ ধরার জন্য আমি সাঁতরে বেড়িয়েছি জলের মাঝে!
প্রশ্ন: সাহিত্যে আপনার পরবর্তী ভাবনা কি?
নাসরীন জাহান: বাংলাদেশকে বিভিন্ন অঞ্চলে নয়, একক অঞ্চল মনে করি। আর একারণেই বাংলার কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের নয়, সকল অঞ্চলের আদিবাসিকে উদ্দেশ্য করে একটা উপন্যাস রচনা করব ভাবছি।
প্রশ্ন: আপনার লেখায় নারীদের নিয়ে বেশকিছু কাজ দেখা যায়। বেগম রোকেয়া বা সুফিয়া কামালের মত কিছু করার উদ্দেশ্য আছে কি না, বলবেন কি?
নাসরীন জাহান: নারী জাগরনের তরে রাজপথে না থাকলেও আমি লেখার মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। তবে আমার চিন্তা-ভাবনা অন্যরকম। পৃথিবী পুরুষশাসিত ঠিক, তবে অনেক ক্ষেত্রে পুরুষও নিপীড়িত। একারণে আমি উভয়কে নিয়ে লেখার চেষ্টা করি। আমার বেশিরভাগ উপন্যাসে নারীচরিত্র প্রধান হলেও এবারের দুটোই একারণে পুরুষ প্রধান।
প্রশ্ন: এবারের গ্রন্থমেলা নিয়ে যদি কিছু বলেন?
নাসরীন জাহান: আমি আশাবাদী মানুষ। রাজনৈতিক কুচক্রি মানুষের কারণে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। শাহবাগের তরুণ সারা বাংলা জাগিয়েছে। শাহবাগ, বইমেলা একাকার। তবে প্রকাশকরা হতাশ, কারণ বই বিক্রি কমে গেছে। তবে লেখক হিসেবে এই বিশাল গণজাগরনকে কেন্দ্র করে আমি বই নিয়ে ভাবছি না।
প্রশ্ন: ধন্যবাদ ম্যাডাম এতক্ষণ সময় দেয়ার জন্য।
নাসরীন জাহান: আপনাকেও অনেক শুভকামনা।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: রাজিউল হাসান
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ; ১ ফাল্গুন, ১৪১৯ বঙ্গাব্দ