৫ মে, ১৯৬৫ সালে ভোলা জেলায় জন্ম তাঁর। ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যে হাতেখড়ি। তিনি তপন দেবনাথ। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এই লেখক বর্তমানে লস অ্যাঞ্জলসে সপরিবারে বসবাস করছেন। অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৩ উপলক্ষে দেশে এসেছেন। এভাবেই আসেন প্রতিবছর। বাংলাদেশি নভেলস-এর পক্ষে আমরা তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি আমরা।
প্রশ্ন: বসন্তের শুভেচ্ছা।
তপন দেবনাথ: ধন্যবাদ। আপনাকেও অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
প্রশ্ন: এবারের গ্রন্থমেলায় আপনার কী কী গ্রন্থ এসেছে?
তপন দেবনাথ: দুটি গ্রন্থ এসেছে। এর মাঝে একটি উপন্যাস, যার নামÑ কবিতার বাসর ঘর। অপরটি ছোটগল্প, নাম – নন্দন। দুটোই রোদেলা প্রকাশনী থেকে এসেছে।
প্রশ্ন: গ্রন্থ দুটি সম্পর্কে আমাদের যদি কিছু বলতেন?
তপন দেবনাথ: নন্দন হল অনুগল্পের সমাহার। এই গ্রন্থ সম্পর্কে বলার তেমন কিছু নেই। এই গ্রন্থে একটি গল্প আছে ‘জৈষ্ঠ্য মাসের শ্রাবণ’, যা যুগান্তর-ওয়াল্টন পুরস্কার পেয়েছে।
আর কবিতার বাসর ঘর হচ্ছে এমন একটি উপন্যাস, যাতে আমি তুলে আনার চেষ্টা করেছি সেই সব মানুষের জীবন, যারা ভাগ্যের সন্ধানে পাড়ি জমায় বিভিন্ন উপায়ে পরবাসে এবং পরবর্তীতে ভিসা জটিলতাসহ অন্যান্য জটিলতায় জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ।
প্রশ্ন: আপনি কি গল্পটা বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে রচনা করেছেন?
তপন দেবনাথ: আমার জীবনে এমন ঘটনা না ঘটলেও বহু মানুষের জীবনে ঘটে এমন। সেই অর্থে বলতে পারেন, বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছি গ্রন্থটা।
প্রশ্ন: আপনার অনেক গল্পেই প্রবাস জীবনের ছায়া পাওয়া যায়। এর কারণ কি?
তপন দেবনাথ: দেখেন, আপনি যেখানে থাকবেন, আপনার কাজে, কথায় সেস্থানের একটা প্রভাব থাকবেই। আমি প্রবাসে থাকি। দেশের থেকে দূরে থাকলে দেশের জন্য মন পোড়ে। আর তাই আমার লেখায় হয়তো বেশিরভাগ সময় প্রবাস জীবনের সমস্যা, কষ্ট ফুটে ওঠে।
প্রশ্ন: আপনার সাহিত্যচর্চার শুরু কবে থেকে?
তপন দেবনাথ: ছোটবেলা থেকেই আমার লেখালেখি করতে ভাল লাগত। তবে ২০০০ সালে আমার প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। নাম ছিল দি সিটিজেন। নামটা ইংরেজি হলেও গল্পটা দেশি। তেজগাঁও রেলগেটে মদ্যপানজনিত একটা ট্র্যাজেডি নিয়ে গল্পটা লেখা।
প্রশ্ন: এ পর্যন্ত আপনার কতগুলো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে?
তপন দেবনাথ: ১৮টি। এরমাঝে পলাতকের জবানবন্দী পাঠক, সমালোচক কর্তৃক আলোচিত।
প্রশ্ন: আপনি কী ধরনের লেখা লিখতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন?
তপন দেবনাথ: ছোটগল্প লিখতে সবচেয়ে বেশি ভালবাসি। আলোচনা, সমালোচনা লিখতে মাঝে মাঝে ভাল লাগে।
প্রশ্ন: আপনার লেখার মাঝে পাঠকের জন্য কোন মেসেজ থাকে কি?
তপন দেবনাথ: অবশ্যই মেসেজ থাকে। মেসেজ ছাড়া সাহিত্য অর্ধমৃত। আমি পজিটিভ চিন্তাধারার মানুষ। অতএব পাঠককেও সে ধারায় প্রবাহিত করার চেষ্টা করি। মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করি, কখনো হতাশ হতে নেই। আশার আলো আছেই।
প্রশ্ন: আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
তপন দেবনাথ: আমি এসএসসি পাশ করি ১৯৮৬ সালে, এইচএসসি ১৯৮৯ সালে এবং ১৯৯২ সালে বিএ পাশ করি।
প্রশ্ন: একেবারে দেশে ফেরার কোন ইচ্ছে কি আছে আপনার? যদি থেকে থাকে, তাহলে কবে নাগাদ?
তপন দেবনাথ: অবশ্যই দেশে ফিরে আসব। তবে কবে, এখনো ভাবিনি।
প্রশ্ন: আবার সাহিত্য নিয়ে আলোচনায় ফিরে আসি। আপনার কোন্ ধরনের লেখা আমরা পরবর্তীতে পেতে যাচ্ছি?
তপন দেবনাথ: এখনো ভাবিনি। তবে সম্প্রতি গার্মেন্টসে ঘটে যাওয়া মানবেতর ঘটনা নিয়ে একটা উপন্যাস লেখার ইচ্ছা আছে।
প্রশ্ন: ভালবাসা সাহিত্যের একটি অংশ। আপনার লেখার ক্ষেত্রে কী ঘটে – ভালবাসাকে কেন্দ্র করে গল্প, নাকি ঘটনার প্রেক্ষিতে ভালবাসা?
তপন দেবনাথ: ঘটনার প্রেক্ষিতে ভালবাসা।
প্রশ্ন: আপনি মূলত কোন ধরনের সাহিত্য রচনা করতে স্বচ্ছন্দবোধ করেনÑ ব্যক্তিকেন্দ্রিক, নাকি সমাজকেন্দ্রিক?
তপন দেবনাথ: আমি ব্যক্তির জীবন থেকে সমাজ, সংসারকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন: ধন্যবাদ, আপনাকে এতক্ষণ আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য।
তপন দেবনাথ: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: রাজিউল হাসান
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ; ৫ ফাল্গুন, ১৪১৯ বঙ্গাব্দ