কালকেউটের সুখ
স্বকৃত নোমান
ছয়.
ঘটনাটি একেবারেই তুচ্ছ। বছর বছর গ্রামের কত ঘরই তো ঝড়-তুফানে উড়ে যায়। মণ্ডলবাড়ির ঘরের টিনগুলোও তো একবার উড়ে গিয়েছিল। তখন কি এতটা হা-হুতাশ করেছিলেন মাস্টার? হা-হুতাশ করে কী লাভ। সাগরকূলে বসবাস, ঝড়-তুফানের সঙ্গে লড়েই তো টিকে থাকতে হয়। কৃষ্ণ ভয়ংকরী বয়াল হুঙ্কার তুলে দানবীয় আক্রোশে এক লহমায় সব কিছু তছনছ করে দিয়ে যাবে, সর্বনাশা জলোচ্ছ্বাস ঘর-গেরস্তি ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। তারপর প্রকৃতি আবার আগের মতো শান্ত হবে, ঘরদোর মেরামত করে মানুষ আবার সংসার শুরু করবে – যুগ যুগ ধরে এমন ভাঙা-গড়াই তো চলে আসছে। সামান্য একটা ছাওড়া উড়ে গেছে, এ আর এমন কী! অথচ এ ঘটনাই কিনা মাস্টারকে বদলে দিল। জীবনের আরেক বাঁকে নিয়ে গেল তাকে। যে উন্মাতাল ঝড় বয়ে যাচ্ছিল তার জীবনে, যে ঝড় তাকে নৈরাশ্যবাদী করে যাযাবর জীবনের দিকে ঠেলে দিয়েছিল, হঠাৎ করেই তা থেমে গেল। ধ্বংসের ভেতরে তিনি নতুন স্বপ্নের বীজ দেখতে পেলেন। জীবনের কাদাপথে পিছলে পড়ে যেতে যেতে আবার তিনি কোমর সোজা করে দাঁড়ালেন। না, এই জীবন অনন্ত মণ্ডলের ছেলে কেশব ম-লের নয়। এমন হালছাড়া র্উবঙ্গ জীবন তার হতে পারে না। অলস অথর্ব পলায়নপরের মতো এভাবে জীবন কাটানোর কোনো মানে হয় না। জীবনকে যাপন করতে হবে, যেভাবে যাপন করেছেন এতটা বছর – আনন্দে, হেসে-খেলে, মানুষের কল্যাণে কাজ করে। যাপিত জীবনে দুঃখ-কান্না ভাঙা-গড়া বাধা-বিঘ্ন আছে, থাকবে। এসব পায়ে ঠেলে জীবন এগিয়ে যায়, এগিয়ে নিতে হয়। অনেক দেরি হয়ে গেছে, এবার প্রসূন মাইতির ভিটায় স্কুলের কাজটা শুরু করতেই হবে। মাসখানেকের মধ্যে ঘরদোরের কাজ শেষ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্কুলটা চালু করা চাই।
নতুন করে মাস্টারের তোড়জোড় দেখে জাবেদ খান হাসে, ‘কদিন পর আবার সব ভুলেটুলে যাবে না তো মাস্টার?’
মাস্টার বললেন, ‘মোটেই না। কোমর এবার ভালো করেই বাঁধিচি খান শায়েপ। যত বাধাই আসুক, এবার আর আমি পিছিয়ে যাবো না। তবে শর্ত, তোমারে পাশে থাকতি হবে।’
পাশে থাকল বটে জাবেদ খান। গ্রামবাসীকে ডেকে বাড়ির উঠোনে বৈঠক করে স্কুলের ব্যাপারে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য সাবাইকে অনুরোধ করল। গরানপুরবাসীর ভাটা পড়া উদ্যমে আবার জোয়ার এলো। প্রসূন মাইতির ভিটায় গজানো আগাছার দঙ্গল আবার সাফসুতরো হলো। ছেলে-বুড়োদের নিয়ে গেরস্তবাড়ি গিয়ে ধান-চাল আর নগদ টাকা সংগ্রহে নেমে পড়লেন মাস্টার। কেউ ফেরাল না, যার যার সামর্থ্যমতো দিল। ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান খসরু তালুকদারও সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন।
কিন্তু যাপিত জীবনে আবার বিঘ্ন হানা দেয়। এক ফাঁড়া কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরেক ফাঁড়া পায়ের কাছে এসে কালনাগিনীর মতো ফণা তুলে দাঁড়ায়। এক রাতে মাস্টারের গোয়ালঘর থেকে হঠাৎ গাইগরুটা উধাও। মণ্ডলবাড়িতে এই প্রথম চুরির ঘটনা। মাঝরাতে ঘুমের ঘোরে বাছুরটার ডাক শুনতে পেয়েছিল চারুবালা। ভাবল, খিদায় বুঝি ডাকছে। রোজ রাতে ঘুমানোর আগে বাছুরটাকে আলাদা করে বেঁধে রাখে, ছাড়ে সকালে দুধ দোয়ানোর সময়। খিদা পেলে রাতে প্রায়ই ডাকাডাকি করে বাছুরটা। আজও হয়ত খিদায় ডাকছে। চারুবালা তবু উঠতে চেয়েছিল। কিন্তু ঠাণ্ডাটা এতই তীব্র ছিল, কাঁথার ওম ছেড়ে বাইরে বেরোতে শরীর সাঁয় দিল না।
পরদিন চুনকুড়ির তীরে গোলপাতার মুড়াটার কাছে জমাট রক্ত দেখা গেল। একটা লাল দাগ নেমে গেছে নদীর দিকে। বিপদের গন্ধ পেলেন মাস্টার। এ রক্ত নিশ্চয়ই তার গাইগরুটার। গরুটাকে তবে বাঘে ধরল? না, তেমন কিছু হলে তো বাঘের পায়ের খোচ দেখা যেত, গোয়ালঘরটা ভাঙা থাকত, হাড়গোড়গুলো অন্তত পাওয়া যেত। বাঘ তো এমন পরিকল্পনা করে শিকার করতে আসে না। সে আসে তর্জেগর্জে, ধুলো উড়িয়ে, ভেঙেচুরে, পাড়া মাতিয়ে। নিশ্চয়ই কোনো সংঘবদ্ধ চক্র পরিকল্পিতভাবে গরুটা জবাই করে মাংস ভাগাভাগি করে নিয়ে গেছে। গরু চুরির এমন ঘটনা তো হামেশাই ঘটে। অথবা এও হতে পারে, গরুটার গলা কেটে গাঙে ভাসিয়ে দিয়েছে।
জোয়ারে রক্তের দাগটা ধুয়েমুছে যায়, কিন্তু মাস্টারের সন্দেহটা যায় না। কাউকে কিছু না বলে মনের সন্দেহ তিনি মনেই চাপা দিয়ে রাখলেন। কাকে সন্দেহ করবেন? এই গ্রামে কে তার শত্রু? তিনি তো কারো এমন কোনো ক্ষতি করেননি যার জন্য কেউ তার এমন একটা ক্ষতি করবে। শত্রুতা ছিল এক আলাউদ্দিনের সঙ্গে। মামলায় হেরে তিনি আলাউদ্দিনের হাত দুটো চেপে ধরে বলেছেন, ‘তোমার কোনো দোষ নি ভাই, ভুল আমারি হইয়েচে। অকারণে আমি তোমারে হয়রানি করিচি। যদি পারো দাদাকে ক্ষমা কুরে দিও। তুমি চালি আমি ক্ষতিপূরণ দিতিও রাজি।’
আলাউদ্দিন হেসে বলেছে, ‘ওসব কথা থাক দাদা। তোমার ক্ষতি আমি কোনোদিন চাইনি, চাবও না। তুমি না বুঝে আমারে আসামি কুরেচ। যাক, ওসব বাদ দ্যাও, যা হইচে তো হইচেই। পুরনো গু ঘাটলি পরে বেশি গন্ধ বেরোয়।’
সেই কত দিন আগের কথা। আলাউদ্দিন শত্রুতা করলে অনেক আগেই করত। এত দিনে নিশ্চয়ই সে ওসব ভুলেটুলে গেছে। তার সঙ্গে সম্পর্কও এখন খুব একটা খারাপ নয়। তাকে সন্দেহের তালিকায় তিনি রাখেন কী করে।
মনে চাপা দিয়ে রাখা সন্দেহটা আরো বাড়ল দিন পনের পর। এবার তার খড়ের গাদায় আগুন লাগল। লোকজন এসে দ্রুত আগুন না নেভালে গোয়ালঘরটাও পুড়ে যেত। গাদাটা রাস্তার পাশে। লোকজন বলাবলি করল, নিশ্চয়ই পথচারী কেউ বিড়ি টেনে জ্বলন্ত গোড়ালিটা ভুল করে চালের ওপর ছুড়েছে। শীতের মৌসুমে এমন অঘটন তো প্রায়ই ঘটে। কিন্তু মাস্টারের মন সাক্ষী দিল অন্য কথা। গরু চুরি ও গাদায় আগুন – দুই ঘটনার মধ্যে তিনি একটা যোগসূত্র খুঁজে পেলেন। তবে ঘটনার পেছনে কে বা কারা, বহু ভেবেও কুলকিনারা পেলেন না। হঠাৎ করে কে লাগল তার পিছে? আরো বড় কোনো অনিষ্টের আশঙ্কায় তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন।
তারপরের ঘটনা আরো ভয়াবহ। গ্রামের আদ্যিকালের বদ্যিবুড়োটিও বলতে পারবে না এমন অঘটন গরানপুরে আগে কখনো ঘটেছে কি না। মাঝরাতে মণ্ডলবাড়ির ঘরের চালে বড় বড় মাটির ঢিল পড়তে লাগল। প্রথম রাতে ঘুমের ঘোরে ঢিলকে তাল ভাবলেন মাস্টার। ঘরের পিছে বড় তালগাছটার তাল ঝরে পড়ল বুঝি। পরক্ষণে মনে খটকা লাগল, এই ভরা জাড়ের কালে তাল আসবে কোত্থেকে! তবে কি গাছের শুকনো ডালপালা ভেঙে পড়ল? নাকি কোনো বানর-টানর তালগাছ থেকে চালের ওপর লাফ দিল। কাৎ থেকে চিৎ হয়ে শুয়ে ভাবতে থাকেন তিনি। কয়েকবার গলাখাকারি দিলেন। বাইরে কোনো সাড়াশব্দ নেই। ভাবতে ভাবতে তিনি আবার ঘুমিয়ে পড়লেন।
পরদিনও একই কাণ্ড। তখন মাঝরাত। দিকচিহ্নহীন বাদাবন সিথানে রেখে গরানপুরের মানুষেরা নিশাঘুমে। স্থাবর-জঙ্গমে ভয়াল নৈঃশব্দ। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে চারুবালার ঘুম ভেঙে যায়। উপর্যুপরি ঢিল পড়ার শব্দে ভয়ে তার হাতে-পায়ে কাঁপুনি ধরে। স্বপ্নগাঙে সাঁতার কাটছেন মাস্টার, ধাক্কা দিয়ে তাকে জাগিয়ে তোলে চারুবালা। হুড়মুড়িয়ে তিনি উঠে বসলেন। ঢিলের শব্দে তার ঘুম উবে গেল। গতরাতের কথা মনে পড়ল। চেহারায় ফুটে উঠল ভয়ের ছাপ। টেমিটা ধরিয়ে তিনি বাইরে নেমে বাড়ির চারদিকে একবার চক্কর দিলেন। না, কোথাও কেউ নেই। ভুচর-খেচর গভীর ঘুমে। উঠোনে একটা চাঙড় টুকরো হয়ে ছড়িয়ে আছে। সেদিকে একবার তাকালেন তিনি। এ চাঙড়টাই কেউ ছুড়েছে, নিশ্চিত হতে পারলেন না। শীতকালে উঠোনবাড়িতে এমন কত চাঙড়ই তো পড়ে থাকে।
মনে অজানা ভয়ের দোলা আর নানা প্রশ্ন নিয়ে ঘরে ফিরে টেমিটা নিভিয়ে আবার তিনি শুয়ে পড়লেন। কী আশ্চর্য, তখনই আবার চালে ঢিল পড়ার শব্দ! আঁশটে কালি-ময়লা ঝরে পড়ল মশারির ওপর। শিউরে উঠলেন তিনি। ভয়ে জড়োসড়ো চারুবালা কাঁথা মুড়ি দিয়ে বসল। মাস্টার জোর গলায় হাঁক দিলেন – কে? অন্ধকার ও কুয়াশা ভেদ করে তার হাঁক মুকনোলির প্রান্তরে গিয়ে পৌঁছায়, কিন্তু কোনো জবাব আসে না। তার হাঁকে গোপেশ ও তাপসীর ঘুম ভেঙে যায়। মায়ের গা ঘেঁষে তারা জড়োসড়ো হয়ে বসে। গোপেশকে নিয়ে টেমি হাতে মাস্টার আবার বাইরে নামলেন, বাড়ির চারদিকে আরেকবার চক্কর দিয়ে আড়ায় উঠলেন। ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত, তার ওপর গাঢ় কুয়াশা। আকাশে চাঁদ নেই, থাকলেও কুয়াশায় ফিকে। টেমির আলো বেশি দূর যায় না। যতদূর যায় তার সীমানার মধ্যে গাছপালা আর ধু-ধু পথ আর জোনাকির ঝাঁক ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না। শীতে আর ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে দুজন উত্তর-দক্ষিণে কিছুটা পথ ঘুরে এলো, অথচ কোনো কিছুর টুঁ শব্দটি পর্যন্ত কানে এলো না। একবার শুধু দক্ষিণে মাজেদ গাইনের বাড়িতে হাঁস-মুরগির খোয়াড়ে মোরগের ডাক শোনা গেল।
মাস্টারের সন্দেহটা এবার পোক্ত হলো। গরু চুরি, গাদায় আগুন এবং ঘরে ঢিল – সব যে একই সুতোয় গাঁথা কোনো সন্দেহ থাকল না তার। কিন্তু কারা এই উপদ্রব শুরু করল? দুই মেয়ের ধর্মান্তরের ঘটনায় মোল্লেপাড়ার হিন্দুরা বুঝি আবার খেপেছে তার ওপর। বাড়িতে ঢিল ছুড়ে তারা বুঝি ঘৃণার প্রকাশ ঘটাচ্ছে। কে জানে, এও তো হতে পারে, তাপসীর ওপর গ্রামের কোনো বদলোকের কুনজর পড়েছে। খারাপ কোনো প্রস্তাব দেয়ায় তাপসী হয়ত তাকে অপমান করেছে। শোধ নিতেই হয়ত লোকটা এমন উৎপাত শুরু করেছে।
এমন নানা দুশ্চিন্তা হানা দিতে থাকে মাস্টারের মনে।
মাঝে কদিন বিরতি, তারপর আবার ঢিল পড়া শুরু হলো। এবার আর চুপ করে থাকতে পারলেন না মাস্টার, শোর-চিৎকার করে সারা পাড়া জাগিয়ে তুললেন। চারদিক থেকে কত লোক এলো। আজিবর বাওয়ালি এলো, নিবারণ সাধক এলো, মাজেদ গাইন এলো, জগতী বেওয়া এলো। খানবাড়ি কিছুটা দূরে, তবু না এসে পারল না জাবেদ খান। সবাই মিলে আদাড়-বাদাড় খুঁজে দেখল, অথচ শত্রুর নাম-নিশানাও পেল না। মানুষ না ভূতপ্রেত তাও কিছু বোঝা গেল না।
লোকজন মণ্ডলবাড়ির উঠোনে জমায়েত হলো। হাতে হাতে টেমি, হারিকেন ও টর্চলাইট। নানাজন নানা কথা বলতে লাগল। মাজেদ গাইন দোষ চাপাল হরিনগরের কোবাদ মাঝির ছেলে ছেরু পাগলার ওপর। জিনের আসর আছে ছেরুর ওপর। রাতবিরাতে সে পথে-প্রান্তরে ঘুরে বেড়ায়। সারা বছর যেমন তেমন, শীত এলে তার পাগলামি অতিমাত্রায় বেড়ে যায়। বাড়ি ছেড়ে কোথায় চলে যায় পাত্তা থাকে না। তার বাপ-ভাই খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে আশা ছেড়ে দিলে পরে চুল-দাড়িতে জট পাকিয়ে, জামা-কাপড়ে সেরখানেক ধুলোবালি নিয়ে হঠাৎ একদিন বাড়িতে হাজির হয়। মাজেদ গাইন সন্ধ্যায় তাকে নদীর চরে গোলপাতার মুড়াটার কাছে দেখেছে। তার সন্দেহ ছেরুকে। তাকে ধরে এনে নিবারণ সাধককে দিয়ে জিনহাজির করাও, দেখবে ফরফর করে সে সব বলে দিচ্ছে।
উঠোনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে মুণ্ডু দোলায় নিবারণ সাধক, মুখে কিছু বলে না। সে যা বলতে চায় রাতের বেলায় তা মুখে আনাও বারণ। গুরুর নিষেধ। যা বলার কাল সকালে বলবে। তার চেহারায় একটা হামবড়া ভাব। এই জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য তাকে লাগবেই, হাবভাবে সে বুঝিয়ে দিচ্ছে। ভাব দেখে তার মনের কথা বুঝতে কারো অসুবিধা হয় না। সবাই অজানা ভয়ে শিউরে ওঠে, উঠোনজুড়ে নীরবতা নামে। মাজেদ গাইন বলে, ‘হুঁ, বলিচি না আমি!’ মাস্টার মুখ ফিরিয়ে নেন। মুখে তার বিদ্রুপের বাঁকা হাসি।
মাস্টার ভেবেছিলেন ঢিল পড়ার ঘটনা বুঝি ঐ রাতেই শেষ। লোকজন যেভাবে চারদিক থেকে ছুটে এসেছে, মানুষ হোক অথবা জিন-ভূত, আর কখনো ম-লবাড়ির ত্রিসীমানায় আসার সাহস পাবে না। প্রায় দশ দিন ঢিল আর পড়ল না বটে। মাস্টারের মাথা থেকে দুশ্চিন্তার বোঝাটা নামল।
শুক্লপক্ষ গিয়ে কৃষ্ণপক্ষ এলো, চুনকুড়িতে এলো ভাঁটিগার গোন, আবার শুরু হলো ঢিল পড়া। মাঝরাত থেকে থেমে থেমে ঢিল পড়তে লাগল। কখনো চালে, কখনো বেড়ায়, কখনো-বা উঠোনে। ঠাকুরঘর বা গোয়ালঘরও বাদ গেল না। আতঙ্কিত মাস্টার বুঝে উঠতে পারেন না কী করা উচিত। সেদিনের মতো শোর-চিৎকার করলে লোকজন এসে জড়ো হতো, শত্রুকে হয়ত হাতেনাতে ধরাও যেত। কিন্তু এই হিম শীতরাতে মানুষকে বিরক্ত করতে ইচ্ছ হলো না তার। গোপেশকে নিয়ে একবার বাইরে নামার কথা ভাবলেন, কিন্তু সাহস করে উঠতে পারলেন না। পেছনে শত্রু লেগেছে কোনো সন্দেহ নেই। এই ঘোর অন্ধকার রাতে পিতা-পুত্রকে খুন করে গোনের স্রোতে ভাসিয়ে দিলে পশু-পাখিরাও তো টের পাবে না।
তাপসী ভয়ে কান্না জুড়ে দিল। মাস্টার ধমক দেন, ‘হাঁদার মতোন কাঁনতিছিস ক্যানো?’ ধমক খেয়ে তাপসীর কান্না থামে, কিন্তু বুকের ধড়ফড়ানিটা থামে না। চারুবালা কতক্ষণ রামনাম জপে আর কতক্ষণ শোয়ামিকে শাসায়, ‘নিচ্চই মা কালীর শাপ। বাড়ির কাচে মায়ের আসন, তার পায়র কাচে বাস কুরে বচরের পর বচর অধর্ম কুরেচ, দেবী এমনি এমনি ছাইড়ে দ্যাবে ভাইবেচ? কতবার বলিচি বাড়ির মদ্দি গরুখাইগো মোছলমানের যাতায়াত বন্দ করো। কেডা শোনে আমার কতা। এদ্দিন পর উনি খিপেচেন, পাল্লি সামলাও।’
‘চুপ কর।’ ধমকে ওঠেন মাস্টার, ‘ভক্তের ঘরে ঢ্যালা মারবে, দেবীর তো আর কাজ নি!’
চারুবালা কি সহজে আর চুপ করে। একের পর এক অঘটন ঘটেই চলেছে, চুপ সে করেই-বা কী করে? ঢিল পড়া থামে, কিন্তু তার ঘ্যানঘ্যানানি থামে না। এসব যে মা চণ্ডীর অভিশাপের ফল, কোনো সন্দেহ নেই তার। দেবী ছাড়া এই জাড়ের রাতে কে আসবে ঢিল মারতে? মানুষের কি প্রাণের মায়া নেই? ধরা পড়লে জ্যান্ত ফিরতে পারবে না এই চিন্তা কি নেই? গরু চুরি, গাদায় আগুন এবং ঘরে ঢিল পড়ার পেছনে একটাই কারণ – মা কালীর অসন্তোষ। অতএব মাকে আগে ঠাণ্ডা করো।
ভোরে জগতী বেওয়াকে ডেকে ঘরদোর লেপামোছা শুরু করল চারুবালা। বাশঘর ঠাকুরঘর হেঁশেল গোলাঘর গোয়ালঘর কিছুই বাদ রাখল না। ঘরে-বাইরে তুলসীধোয়া জল ছিটাল। বিকেলে মোল্লেপাড়া মা রক্ষাকালী মন্দিরে গিয়ে পুজা দিল, দুর্গাদেবীর নামে বাদায় ডেকি মুরগি ছাড়ল, সন্ধ্যায় ধুপধুনো জ্বালিয়ে সারা বাড়ি সুগন্ধে ভরিয়ে দিল। তারপর চানটান করে পানের বাটা নিয়ে বসল। জগতীকে যেতে দেয়নি, সে হেঁশেলে ভাত চড়িয়েছে। পান চিবুতে চিবুতে চারুবালা জোর বিশ্বাসের সঙ্গে বারবার বলল, ‘দেকিস তোরা, আজ রাতি এট্টা ঢ্যালাও পড়বে না।’ মায়ের আশ্বাস পেয়ে গোপেশ ও তাপসীর ভয় কিছুটা কাটে। আজকাল সাঁঝ নামলেই ভয়ে তারা কাবু হয়ে পড়ে। অন্ধকারে মিশে বিশালদেহী লম্বা নখওয়ালা একটা কালো দৈত্য যেন গরানপুরে চৌসীমানায় দাঁড়িয়ে যায়। তার ভয়ে একা তারা উঠোনে পর্যন্ত নামার সাহস পায় না।
ক্রমে রাত বাড়ে। ধীরে ধীরে খাল-নদী-বাদা-আবাদ-পথঘাট সব নীরবতার উদরে ঢুকতে থাকে। সারা দিনের পরিশ্রমে চারুবালার শরীর ভেঙে আসে, খেয়েদেয়ে সে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ল। তার সঙ্গে গোপেশ আর তাপসীও। কেবল একা জেগে মাস্টার। রোজ শুতে যেতে তার অনেক রাত হয়। দু-তিনটি পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকার গ্রাহক তিনি, কদিন পরপরই ডাকপিয়ন এসে দিয়ে যায়। টেবিলে হারিকেন রেখে মশারির ভেতর পা মেলে বসে তিনি সেগুলো পড়েন। পড়তে পড়তে একসময় চোখে তন্দ্রা নামে। কখনো পত্রিকাটা বুকের ওপর রেখে নাক ডাকতে শুরু করেন। মাঝরাতে ঘুম ভাঙলে হারিকেনের সলতেটা কমিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েন।
আজও পড়তে পড়তে তার চোখ ধরে আসে, ঘুমের ঝোঁকে চোখে ঝাপসা দেখেন। পত্রিকাটা টেবিলে উল্টো করে রেখে হারিকেনের সলতেটা কমিয়ে বালিশে মাথা রাখলেন। সবে তার নাক ডাকা শুরু হলো, অমনি ঘরের চালে প্রচণ্ড শব্দ। হুড়মুড়িয়ে তিনি উঠে বসলেন। একটা নয়, দুটো নয় – গণ্ডায় গণ্ডায় ঢিল পড়তে লাগল। কোত্থেকে আসছে এত ঢিল, কে বা কারা মারছে ভগবান মালুম। চারুবালা জেগে উঠে রামনাম জপতে শুরু করল। তার সব বিশ্বাস ভেঙে চুরমার। রুষ্ট মা কালী তুষ্ট হলো না – দুঃখে তার কান্না আসে। গালাগালি করা মাস্টারের স্বভাবে নেই, কিন্তু রাগটা তখন এমন চরমে উঠল, মুখে আসা গালিগুলো আটকে রাখতে পারলেন না। কিন্তু গালিতে কি আর শত্রুর শত্রুতা দমে? থেমে থেমে অদেখা শত্রু তার ঢিল ছোড়া প্রায় সারারাত চালিয়ে গেল।
পরদিন বেলা উঠার আগেই জগতী বেওয়াকে নিবারণ সাধকের বাড়ি পাঠিয়ে দিল চারুবালা। তুকতাকের থলে নিয়ে নিবারণ হাজির হলো। গ্রামের নারী-পুরুষ ভেঙে পড়ল ম-লবাড়িতে। আসল ঘটনা আর কারো অজানা থাকল না। অনন্ত মণ্ডলের প্রেতাত্মা খেপেছে। ধর্মত্যাগী তার দুই নাতনির সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদ করতে ছেলেবউকে সে বারবার সতর্ক করেছে। প্রথমে গোয়ালের গরু মেরে সতর্ক করল, ছেলেবউ তার আমলে নিল না। গাদায় আগুন দিয়ে ফের সতর্ক করল, তবু চারুবালার হুঁশ হলো না। রাগে-ক্ষোভে সে বাদার অতল-বিতল থেকে উঠে গাঙের ওপারের জঙ্গলায় দাঁড়িয়ে ঢিল মারতে শুরু করেছে। ভাগ্য ভালো সময় থাকতে নিবারণকে খবর দেয়া হয়েছে, নইলে আরো বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারত।
নিবারণের কথা শুনে উপস্থিত নারী-পুরুষরা মুণ্ডু দোলায়। কথা ঠিক। নইলে এত ঢিল আসবে কোত্থেকে? যতই শত্রুতা থাকুক, এই হিম জাড়ের রাতে কাঁথার আরাম ছেড়ে কে আসবে ঢিল মারতে? এসব মানুষের কাণ্ড হলে এত দিনে নিশ্চয়ই মানুষটা ধরা পড়ত।
চারুবালা আঁচলে মুখ লুকায়, চোরাচোখে মাস্টারের মুখের দিকে তাকায়। অকারণে সে শোয়ামির দোষ দিয়েছে। কেঁদেকেটে গোপেশকে না পাঠালে গোপেশ কোনোদিন রতনপুর যেত? সব কিছুর জন্য সে নিজেকে দায়ী করে। মাস্টারের চেহারায় দোনোমনা ভাব। তন্ত্রমন্ত্রে তার বিশ্বাস নেই, তাই বলে নিবারণের যুক্তি একেবারে উড়িয়েও দিতে পারছেন না। হলেও হতে পারে। দু-দুটো মেয়ে ধর্ম ত্যাগ করল, বাবা তার ক্ষুব্ধ হবে নাই-বা কেন? বাবার অশান্ত আত্মাকে শান্ত করার দায়িত্ব নিবারণের ওপর ছেড়ে দিয়ে তিনি চুপচাপ বসে রইলেন। নিবারণ তার দুর্বোধ্য মন্ত্র পাঠ শুরু করে। মন্ত্রশক্তিতে ভর করে সে সারা বাড়ি দাপিয়ে বেড়ায়। এত বড় বাড়ি বন্ধন করতে করতে বেলাঠাকুর গড়াতে গড়াতে মাথার ওপর উঠে বসে। ঠিক দুপুরে বাড়ির অগ্নিকোণায় সর্বশেষ তাবিজটা গেড়ে এসে নিবারণ ঘোষণা করল, ‘আর ভয় নি বাবু, বাড়ি একন একদম নিরাপদ।’
কী মন্ত্র পড়ে বাড়ি বন্ধন করল নিবারণ, সেদিন থেকেই ঢিল পড়া বন্ধ। অনন্ত মণ্ডলের ক্ষুব্ধ আত্মাকে সে হৃষ্ট করতে পেরেছে – কেউ বিশ্বাস করুক না করুক, চারুবালার বিশ্বাসে ঘাটতি নেই। এই উপকারের প্রতিদান হিসেবে নিবারণকে নেমন্তন্ন করে খাওয়াল, চাল ডাল আর নগদ টাকা দিল, তবু তার প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ হয় না। নিবারণের প্রশংসায় গ্রামবাসীও পাঁচমুখ। গুনিন বটে নিবারণ। কেবল বাদার বাঘই নয়, জিন-পরি ভূত-প্রেতও যে তার কথায় ওঠবোস করে আবারও তা প্রমাণ হলো। মুখে প্রকাশ না করলেও মনে মনে তার প্রতি মাস্টারও কৃতজ্ঞ হলেন।
দুদিন পর অনামা প্রেরকের একখানা চিঠি পেলেন কেশব মাস্টার। গরানপুর বাজারে ফেলুর দোকানে রেখে গেছে ডাকপিয়ন। বাজার বলতে চারটা মুদিখানা, দুটো ঘুমটি, তিনটা চা দোকান, কয়েকটা পান-তামাকের ঝুপড়ি এবং রাস্তার ওপর কাঁচা তরিতরকারির পসরা। সারাদিন বাজারে শূন্যতা খাঁখাঁ করে, দু-চারটা কুকুর-বিড়াল ছাড়া জনমানুষের দেখা মিলে না। কিন্তু বিকেলে সরগরম হয়ে ওঠে। ফেলুর দোকান গ্রামের ময়মুরব্বিদের আড্ডাখানা। সন্ধ্যা নামলে কেউ টর্চলাইট হাতে, কেউ টেমি হাতে, কেউ-বা হারিকেন হাতে দোকানটায় এসে জড়ো হয়। ফেলুর হাতেভাজা গরম গরম বুট-পেঁয়াজু আর কড়া লিকারের দুধ-চা খেতে খেতে, সাদা-কালো টেলিভিশনে বিটিভির অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে আড্ডা জমে ওঠে। রাত আটটা-নয়টার আগে আড্ডা ভাঙে না। গরমকালে তো কোনো কোনোদিন দশটা-এগারোটাও বেজে যায়। রোজ হরিনগর থেকে ফেরার পথে মাস্টার একবার ফেলুর দোকানে ঢুঁ মেরে যান। তার নামে চিঠিপত্র এলে ডাকপিয়ন মাঝেমধ্যে ফেলুর দোকানে রেখে যায়।
চিঠিটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলেন মাস্টার। হলুদ খামের ওপর দু-টাকার টিকিট লাগানো। দোকানের টুলে বসে চিঠিটা পড়তে পড়তে মাস্টারের ভুরু কুঁচকে যায়। একবার পড়ে উল্টেপাল্টে আবার পড়লেন। কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠল। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না চিঠিটা তার নামে এসেছে। মনে হচ্ছে ডাকপিয়ন ভুল করে অন্য কারো চিঠি তার নামে রেখে গেছে। খামের লেখাটা তিনি আবার পড়লেন। না, কোনো ভুল নেই। স্পষ্ট লেখা – প্রাপক কেশবচন্দ্র মণ্ডল, পিং মৃত অনন্তচন্দ্র মণ্ডল, সাং গরানপুর…।
চিঠিখানা ভাঁজ করে বুকপকেটে রেখে দোকানের টুলে চুপচাপ বসে রইলেন মাস্টার। হাটুরেদের হাঁকডাক, কুকুরদের ঘেউ ঘেউ, ফেলুর ক্যাসেটপ্লেয়ারে ধুমধাড়াক্কা হিন্দি গান – কোনো কিছুই তার কানে ঢুকছে না। মাথায় কেবলই ঘুরপাক খাচ্ছে চিঠির কথাগুলো। গরু চুরি, গাদায় আগুন এবং ঘরে ঢিল পড়ার পেছনে যে সন্দেহটা সারাক্ষণ তার মনে গলায় আটকানো কইমাছের কাঁটার মতো খচখচ করছিল, চিঠিটা সেই সন্দেহকে আরো পোক্ত করে দিল। নিবারণ মিছেমিছি তার কাছ থেকে কতগুলো টাকা খসিয়ে নিয়েছে। বাবার প্রেতাত্মার রাগ-ক্ষোভ সব বোগাস, তার পেছনে জ্যান্ত মানুষ লেগেছে। এ সবই জ্যান্ত মানুষের শত্রুতা। কিন্তু শত্রুটা কে, কিছুতেই তিনি আন্দাজ করতে পারছেন না। বনদস্যু মোছলেম তালুকদার কিনা! বাদায়-আবাদে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। ধনী গেরস্তবাড়িতে চিঠি পাঠিয়ে দলবল নিয়ে সে নিশিরাতে ডাকাতি করতে আসে। দাবিকৃত টাকা দিতে না পারলে কেরোসিন ঢেলে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়, পুরুষটাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়, কুপিয়ে লাশ ফেলে দেয়, যুবতী মেয়েটার ইজ্জত লুটে নেয়। পাহারা বসিয়েও লাভ নেই। কার বাড়ি কে কদিন পাহারা দেবে। একদিন তো পাহারা উঠাতেই হবে। সেদিন তো আর টাকা-পয়সা দিয়েও নিস্তার মিলবে না।
কিন্তু এই চিঠিতে টাকাপয়সার কোনো কথা নেই, শুধু গালাগাল আর হুমকি-ধমকি। বাবার মতো তার লাশেরও হদিস থাকবে না, প্রসূন মাইতির মতো তাকেও খুন করা হবে – এসব কথা মোছলেম ডাকু কেন লিখবে? তার সঙ্গে তো মাস্টারের কোনো শত্রুতা নেই। তার দরকার টাকা। তার চিঠি হলে স্পষ্ট ভাষায় লেখা থাকত – এত এত তারিখে আমার অমুক লোক তোমার সঙ্গে অমুক জায়গায় দেখা করিবে, এত এত টাকা তাহার হাতে তুলিয়া দিবে। খবরদার, পুলিশে খবর দেয়ার চেষ্টা করিবে না। করিলে জ্ঞাতিগোষ্ঠী কেহ রেহাই পাইবে না…।
সুতরাং এই চিঠি মোছলেম তালুকদারের হতেই পারে না। হুমকির ধরন দেখে মাস্টার বুঝতে পারেন পত্রদাতা মুসলমান। নইলে কাফের-বেদ্বীন এবং মালাউন বলে গালাগাল করত না।
তবে কি দুই জামাতার কেউ পাঠাল? মাস্টারের সন্দেহ হয়। হতেও তো পারে। বিয়ে করে তারা শ্বশুরবাড়ি আসতে পারছে না, মনে তাদের ক্ষোভ জাগাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। হুমকি-ধমকি দিয়ে শ্বশুরকে বুঝি নরম করতে চাইছে! নাকি আলাউদ্দিন অথবা তার মতো অন্য কারো নজর পড়েছে প্রসূন মাইতির পরিত্যক্ত ভিটাটার ওপর। কিংবা হরিনগরের হিন্দুদের মতো তাকেও দেশছাড়া করতে চাইছে কেউ?
চুনকুড়ির জোয়ার-ভাটার মতো মাস্টারের মনে নানা সন্দেহ ওঠানামা করে।
চিঠিটা একবার জাবেদ খানকে দেখানোর কথা ভাবলেন, কী ভেবে পরে চেপে গেলেন। জাবেদ খান মেজাজি মানুষ, কখন কী হট্টগোল বাধিয়ে বসে ঠিক নেই। তাতে শত্রুর শত্রুতা আরো বাড়বে। চারুবালাকেও চিঠিটার কথা কিছু জানালেন না। বেচারির মন এমনিতেই ভাঙা, এমন চিঠির কথা শুনলে আরো ভাঙবে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা গোপন করে ঘটনার শেষ দেখার অপেক্ষায় থাকলেন তিনি।