শেকড়ের দাগ
মহসীন হাবিব
মাহবুব চৌধুরী সাহেব গুলশান-২-এর বাড়িটি অল্প কয়েকদিন আগে একটা অ্যাম্বাসির কাছে ভাড়া দিয়েছেন। এখন থাকেন বারিধারার বাড়িতে। এই বাড়িতে থাকার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল গাড়ির গ্যারেজের জন্য এখানে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। তিনি পাঁচটি গ্যারেজ রুম করেছেন। গ্যারেজের সাথেই সারি বাধা আরো তিনটে রুম তৈরি হয়েছে। একটি সার্ভেন্ট রুম, অন্য দুটিতে থাকে গার্ড আর ড্রাইভাররা।
পাঁচটি গ্যারেজের চারটিতে গাড়ি। একটি ফাঁকা। কেউ বেড়াতে এলে তাদের গাড়ির জন্য ওটা দরকার হয়।
মাহবুব চৌধুরী তার স্ত্রীকে নিয়ে গ্যারেজের সামনে এসে দাঁড়ালেন। স্ত্রী শাহিদা মাহবুব বললেন, ‘তুমি ঐ রক্সি আর টয়োটা এই দুটো নিয়ে যাও। বিএমডব্লিউ, আর প্রাডো দেখিয়ে বললেন, আর এই দুইটা থাক। গ্রাম দেশে যাবে, আজেবাজে জায়গা দিয়ে, ভাঙা মাটির রাস্তা দিয়ে এসব গাড়ি চালালে গাড়ির থাকে না। আর এ কয়দিন গাড়িগুলো ইউজ তো করবে একেবারে এলিট শ্রেণী! পায়ে স্যান্ডেল পর্যন্ত নেই!’
মাহবুব সাহেব মুখে হাত বুলিয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ, ওই দুটোই নিয়ে যাবো।’
‘তুমি কি কালই ফরিদপুর যাচ্ছ? কাল তো সিলভিয়া আসছে!’
‘ও তো সকালেই ঢাকায় এসে নামবে। আমি ওর সাথে সারাদিন থেকে বিকেলে যাব। আমিও যাবো তোমার সঙ্গে এয়ারপোর্টে।’
এই এক ব্যাপার। মেয়ে আসছে কেন্ট থেকে এক বছর পর। অথচ তাকে চলে যেতে হবে ফরিদপুর। ম্যাডামের নির্দেশ। শুধু টাকা খরচ করলেই হবে না। এই তিন মাস পুরা সময়টা ব্যয় করতে হবে নির্বাচনী এলাকায়। মনে হলেই গায়ে জ্বর চলে আসে। যত্তোসব আজেবাজে ব্যাপার নিয়ে দৌড়াতে হবে। হিন্দু-বিন্দু এদের হাতে হাত রাখতে হবে। অথচ সবাই জানে পায়ে ধরলেও ওরা ভোট দেবে না। কোথায় কোন মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে, কোথায় খুন হল, কার হাত-পা কেটে দিয়েছে এসব দেখতে হবে। ছোট করে বক্তব্য রাখতে হবে। একেবারে বিশ্রী ব্যাপার।
অবশ্য সিলভিয়া টেলিফোনে বলেছিল, ‘ড্যাড, আই উড লাইক টু সি ইওর কনসটিটুয়েন্সি।’ কিন্তু থাকবে কোথায় ওখানে গিয়ে। ছোটবেলা থেকেই সে কেন্ট-এ বসবাস করে, কেন্ট স্কুল অফ ইংলিশে পড়াশোনা করেছে। এখন এই গরমের দিনে গ্রামে গিয়ে থাকা একেবারেই অসম্ভব। সুইমিংপুল, এমনকি ভালো বাথটাব পর্যন্ত নেই। উপজেলার বাড়ির কমোড সে ইউজ করতে পারবে না। হাঁফিয়ে উঠবে।
মেয়েটা সত্যিই ইউরোপের বাতাসে মিশে গেছে। ভালো করে তো বাংলাই বলতে পারে না। এখন ওর বিয়ে করা উচিৎ। বিয়ের কথা শুনলেই অদ্ভুত করে তাকায়। যেন এমন বিশ্রী কথা কখনো শোনেনি। তারপর বলে, ‘ড্যাড, থ্রো দিস্ কাস্টম্স্ অ্যাওয়ে প্লিজ! ডোন্ট বি মেডিয়েভ্ল। আমার বয়ফ্রেন্ড বিয়ে পছন্দ করে না। সো, ইট্স্ ওকে।’
সিলভিয়া বড় লাভলি। এখনো মাহবুব চৌধুরীর মনে হয় মেয়েটাকে কোলে নিয়ে হাঁটতে পারলে বেশ হতো। এই মেয়ে রেখে কার ইচ্ছা হয় ময়লা পোষাক-আশাক গায়ে কতগুলো মানুষের সাথে গিয়ে অভিনয় করতে! অথচ তাঁকে সেটাই হবে কাল থেকে। তিন মাসের জন্য। মন্ত্রিত্বের স্বাদ পেতে হলে তো কিছু ছাড় দিতেই হয়। এবার নমিনেশানই প্রায় হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছিল। সবাই বুঝতে পারছে যে আওয়ামী লীগের যা অবস্থা, তাতে বিএনপি থেকে কলাগাছ দাঁড়ালেও জয়ী হবে।
মাহবুব চৌধুরী ছাড়াও আরো তিনজন ক্যান্ডিডেট ছিল। মোসাদ্দেক আলী ওরফে এডভোকেট মুসা, নব্য ধনী মোনায়েম খান আর জোটের শরীক দল জামায়াতে ইসলামের মওলানা আহ্সানুল্লাহ্ বাখরী।
ম্যাডামের সামনে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে মোসাদ্দেক আলী বেশ একটা আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল। বলেছে, ‘ম্যাডাম, আমাদের মহান নেতা শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে উজ্জ্বল উপস্থিতির সময় আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্র। নেতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতেতে আসি। ফলে ইউনিভার্সিতেই আমাকে কলা ভবনের সামনে ফেলে বিরোধী ছাত্ররা হত্যার চেষ্টা করে। আমার গায়ে সতেরটি কোপ দেওয়া হয় এবং একটি গুলি করে। আল্লাহ’তালার অপার মহিমায় চার মাস হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে সুস্থ হয়ে উঠি।
সে শার্টের হাতা গুটিয়ে ও কলারের বোতাম খুলে দেখিয়ে বলল, ‘তার প্রত্যেকটি দাগ এখনো আমার শরীরে বিদ্যমান। এই দাগের মতোই শহীদ জিয়ার আদর্শ থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়ার প্রতিজ্ঞা দৃঢ় আছে ইনশাল্লাহ। এরশাদ আমাকে আন্দোলন থেকে সরাতে চেয়েছে, ম্যানেজ করতে চেয়েছে। ব্যর্থ হয়ে আড়াই বছর প্রায় বিনাবিচারে জেলখানায় পুরে রেখেছে। ম্যাডাম, এসব অনেক কাহিনিই আপনিসহ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক সদস্যের জানা আছে।’
ম্যাডাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি দলের জন্য কী করবেন? নির্বাচনী খরচ কত আপনার?
মোসাদ্দেক বলেছে, ‘ম্যাডাম, দীর্ঘদিন যাবত এলাকার মানুষের খোঁজখবর নিই, তাদের সুখ-দুঃখে অংশীদার হই। আমি ফরিদপুর জেলা জজ কোর্টে এ্যাডভোকেট হিসাবে প্র্যাকটিস করলেও আমাদের এলাকার কোনো মানুষের কাছ থেকেই ফি গ্রহণ করি না। মন-প্রাণ দিয়ে তাদের পক্ষে কোর্টে লড়ি। সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সাথে দরবার করে এলাকায় ত্রাণ বরাদ্ধ নিশ্চিত করেছি বহুবার। উপজেলাবাসী তা জানে।’
মাহবুব সাহেব মনে মনে হাসলেন। ম্যাডাম এসব আদর্শের কথায়, দেশপ্রেম-টেমের কথায় মনে মনে রাগ হন। গাধাটা তা জানে না। ওসব আবেগ, অবদান এসব ম্যাডামের কাছে কোনো মূল্য নেই। ম্যাডাম আদর্শের রাজনীতি করেন না। করেন ক্ষমতার রাজনীতি। তিনি কথা বলার সময় দাঁড়ি কমায় ভুল করেন। দাঁড়ি-কমা ঠিক থাকে না। মাঝে মাঝে এই দাঁড়ি কমা ঠিক না থাকার কারণে অর্থ ভিন্ন হয়ে যায়। যখন মাহবুব চৌধুরীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন তখন বলেছিলেন, ‘মাহবুব সাহেব, আপনি একজন সিনিয়র। নেতা কিন্তু আপনার তো বদনাম আছে আপনি এলাকায়। যান না শুধু নির্বাচনের সময়। ঘুরে আসেন সে যাই হোক। দলের, জন্য কী চিন্তা করছেন?’
মাহবুব সাহেব বললেন, ‘ম্যাডাম আমি দলের জন্য সামান্য টাকা দলের ফান্ডে দিয়েছি। ওটা তারেক ভাই জানেন।’
‘হ্যা তারেক বলেছে আমাকে। নির্বাচনী খরচের ব্যাপারে কী ভেবেছেন?’
‘আমার ম্যাডাম তিন কোটি বাজেট, লাগলে আরো করবো।’
আর কোনো সমস্যা হয়নি দলীয় নমিনেশন পেতে। অবশ্য সমস্যা হওয়ার কথাও ছিল না। সাক্ষাৎকারটা ছিল আনুষ্ঠানিক মাত্র। যা বলার আগেই তারেক রহমান সাহেব বলে দিয়েছিলেন।
হঠাৎ মনে পড়ল কয়েকটি জায়গায় ফোন করতে হবে। এসব টাকা তো আর নিজের ঘর থেকে খরচ করা যায় না। এক সময় ইনভেস্ট করতে হয়। এখন করবেন কেন? বিএনপি শাসনামলে তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকতে কত ছোটলোককে হাত ধরে টেনে তুলেছেন। কোটি কোটি টাকার মুখ দেখিয়েছেন। তারা নির্বাচনী খরচ বহন করবে না? যশোরের ফটকা সেলিম, ফরিদপুরের সানী, নারাছুগঞ্জের আলম। আরো কয়েকজন! অবশ্য এ কথা ঠিক এই ছেলেগুলো সব তাকে পীরের মতো ভক্তি করে।
স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকা ক্লাবের উদ্দেশে রওয়ানা হলেন মাহবুব সাহেব। গলা নিচু করে স্ত্রীকে বললেন, ‘আমাদের ম্যাডামের সঙ্গে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর একটি সাংঘাতিক মিল আছে, জানো?’
‘না, কী মিল বলতো?’
‘তুমি কি জানো, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নামাজ পড়তে জানতেন না?’
‘কি বলছ তুমি? অতবড় মুসলিম জাতির নেতা, তিনি নামাজ পড়তে জানবেন না, কী বলছ?’
মাহবুব সাহেব চশমার নীচ দিয়ে তাকিয়ে বললেন,‘আমি ঠিকই বলেছি। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম জুম্মাদিনে লিয়াকত আলী খান তাকে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আজ তো শুকরিয়া নামাজ পড়তে হবে।’ জিন্নাহ সাহেব প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, ‘লিয়াকত, আই ডোন্ট নো, হাউ টু প্রে।’
‘তারপর?’
‘লিয়াকত আলী খান বলেছিলেন, আপনার কিছু করার দরকার নেই, শুধু আমি যেভাবে যেভাবে উঠব বসব, আপনি আমার দেখাদেখি তাই করবেন। জিন্নাহ বাধ্য হয়ে তাই করেছিলেন।’
মাহবুব সাহেব একটু বিড়বিড় করে বললেন, ‘এজন্য আমার আব্বাও তাঁকে মনে মনে পছন্দ করতেন না। আব্বা মুসলমানদের স্বার্থের বাইরে কিছু ভাবতে পারতেন না। এটা তার বড় গুণ ছিল।’
‘কিন্তু ম্যাডাম তো নামাজ পড়েন। আমি তাঁকে টেলিভিশনের পর্দায় নামাজ পড়তে দেখেছি।’
মাহবুব সাহেব হেসে বললেন, ‘যে নামাজ টেলিভিশনের পর্দায় দেখায়, উনি সেই নামাজটাই পড়েন।’
‘ কিন্তু ম্যাডামের সঙ্গে তাঁর বিশেষ মিলটা কোথায়?’
‘মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ব্যক্তিগত জীবনে ধর্ম বিশ্বাস করতেন না। মানে ইসলামে তাঁর বিশ্বাস ছিল না। পালন করা তো দূরে থাক। অথচ কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষ থাকতে তিনিই ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করলেন। পৃথিবীতে ধর্মের ভিত্তিতে স্বাধীন হওয়া একমাত্র মুসলমান দেশ হল পাকিস্তান, একজন নাস্তিকের তৈরি দেশ।’
‘আর ম্যাডাম?’
‘ব্যক্তিগত জীবনে তিনি শেখ হাসিনার চেয়ে অনেক কম ধার্মিক। আমি কথাটা ভদ্রভাষায় বললাম, তুমি বুঝে নিয়ো। কিন্তু ধর্মের দোহাই দিয়ে তিনি কিন্তু বারবার ক্ষমতায় আসছেন। এবারো আসবেন।’
তিনি একটু থামলেন। তারপর বললেন, ‘দুজনই একাধিক বিশেষ খাবার পছন্দ করেন, যা ইসলামে অনুমোদন নেই।’
মাহবুব সাহেব একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘জিয়াউর রহমানকে আমি কাছে থেকে দেখেছি। তাঁর দুটি গুণ ভোলার মত না।’
শাহিদা মাহবুব বললেন,‘কী গুণ?’
‘একটি হল তিনি অর্থনৈতিকভাবে ছিলেন ফেরেশতার মত সৎ। এটি কিন্তু চারটি খানিক কথা না। তাঁর চোখের সামনে অন্যরা দুর্নীতি করেছে, কিন্তু দুর্নীতি তো দূরের কথা, জেনেশুনে একটি পয়সা কোনোদিন রাষ্ট্রের অপচয় করেননি।’
‘আর দ্বিতীয়টি?’
‘হ্যা, দ্বিতয়িটি হল, তিনি নারীর প্রতি একেবারেই আসক্ত ছিলেন না। অথচ তাঁর জীবনটা ছিল খুবই দুঃখের।’
‘তুমি কী ম্যাডামকে মনে মনে পছন্দ কর না?’
‘অবশ্যই করি, তিনি ছাড়া গতি আছে? তিনিই এদেশে ইসলামের ঝাণ্ডা সমুন্নত রাখবেন। আমাদের প্রয়োজন ইসলাম রক্ষা। সে ব্যাপারে তিনি আপোষহীন।’
পরদিন সকাল ৯টা। সিলভিয়াকে এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন অ্যারাইভাল সিল দিল। মাহবুব চৌধুরী নিজেই ইমিগ্রেশনের ভেতরে ঢুকেছেন। বেশ কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী তাকে সালাম দিচ্ছে। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সবাই চেনে। তাছাড়া নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে। এ সময় সব নেতাকেই সরকারি লোকেরা খুব মান্য করে। বলা তো যায় না, কে ক্ষমতায় যায়!
মেয়েকে দেখেই তিনি হাসলেন। সিলভিয়া আগের মতোই স্লিম। গায়ে শাদা টি শার্ট। পরণে আকাশী রঙের লেডিস স্কীন টাইট আমেরিকান জিন্স প্যান্ট। পায়ে ইয়াংকি হিল। সে দৌড় দিয়ে এসে মাহবুব সাহেবকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘হাই ড্যাড! আই অ্যাম রিয়েলি হ্যাপি টু সি ইউ। ও মাই গড! আই লাভ ইউ।’
বিএমডব্লিউর পিছনের সিটে বসে আছেন মাহবুব চৌধুরী ও তার একমাত্র কন্যা ব্রিটেনের কেন্ট প্রবাসী সিলভিয়া এবং স্ত্রী শাহিদা। গাড়ি দ্রুত ছুটে চলেছে এয়ারপোর্ট রোড ধরে বারিধারার দিকে। এই কোয়ালিটির গাড়ি ঢাকায় খুব কম আছে। গাড়িটা ঢাকা আনতে প্রায় এক কোটি খরচ পড়েছে। জার্মান কোম্পানির একেবারে লেটেস্ট মডেল।
‘তোমার পলিটিক্সের খবর কী ড্যাড?’
‘এই চলছে আর কি?’
‘তোমাদের এখানে নাকি ইলেকশন?’
‘হ্যাঁ, এই তো এসে গেল।’
‘গত টার্মে তো ড্যাড তোমরা উইন করতে পারলে না, এবার পারবে?’
‘অফকোর্স উই উইল।’
‘দ্যাট্স ফাইন। ড্যাড, তুমি যেবার মন্ত্রী হলে, তখন বলেছিলে শারজায় বাড়ি কিনবে। তুমি কিন্তু কথা রাখনি।’
‘হ্যাঁ, অনেক টাকার ব্যাপার, টাকা-পয়সা তো জোগাড় করে উঠতে পারছি না।’
‘শারজাহ্ ইজ দি ফাইনেস্ট সিটি ইন দি গ্লোব। ড্যাড, তোমরা কী এই দেশটাকে একদিন শারজাহর মত বানাতে পারবে?’
মাহবুব সাহেব বললেন, ‘ধুর পাগলি, তাই হয় নাকি। আমাদের কি ওদের মত তেল আছে?’
‘তেল ছাড়াও তো কত দেশ ড্রিম কান্ট্রি হয়ে গেছে। তোমরা রাজনীতিবিদরা বোধ হয় ওভাবে ভাবো না, তাই না?’
‘না। সত্যি কথা বলব?’
‘নিশ্চয়ই।’
‘জাতীয় পর্যায়ের সব নেতার ছেলে-মেয়ে বিদেশে পড়াশোনা করে। ঠিক তোর মত। তারা দেশ নিয়ে ভাবলে কি এই পড়ানো সম্ভব হতো?’
‘ড্যাড, একটা কথা জানতে পারি?’
‘নিশ্চয়ই।’
‘তোমরা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি কর কেন?’
‘যার কোনো স্বপ্ন নেই তার সামনে থাকে ধর্ম। ঠিক তেমনি যে দেশের রাজনীতির কোনো স্বপ্ন নেই সে দেশের রাজনীতির প্রধান ইস্যুও হল ধর্ম। ধর্মের একটি বিশাল কার্যকারিতা আছে।’
‘কী সেটা?’
‘ধর্ম তীব্রভাবে অনুঘটকের কাজ করে। উই মেক পরিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর দি পরিটিশিয়ান।’
‘আজব দেশ তোমাদের।’
মাহবুব সাহেব চশমার নীচ দিয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসলেন।