শেকড়ের দাগ
মহসীন হাবিব
গ্রীষ্মের এই পড়ন্ত বিকেলে প্রকৃতি তার অকৃপণ ডালা মেলে দিয়েছে। সারাদিন ভ্যাপসা গরমের পর এখন বেশ চমৎকার বাতাস বইতে শুরু করেছে। আহ্! সত্যিই বাংলার গ্রামের প্রকৃতির এক অদ্ভুত মিষ্টতা। প্রকৃতি যখন স্বাভাবিক মধুর মেজাজে থাকে পশু-পাখি তা উপভোগ করে। প্রকৃতির ভাষা মনে হয় মানুষই সবচাইতে কম বোঝে। বিকেলে উপজেলা থেকে মাধবদিয়া যাবার পথটি শান্ত হলেও দু’পাশের বিক্ষিপ্ত গাছগুলো নানা জাতের পাখির কলরবে মুখরিত হয়েছে। কয়েকটি চড়ুই নিজেদের মধ্যে ছি-বুড়ি খেলছে। অন্য পাখিরা নাক গলাতে আসেনি। কোথাও চুপচাপ দুটি শালিক বসে নিজেদের মধ্যে নিচু গলায় প্রেমালাপ করছে। একটা বাবলা গাছের মগডাল থেকে পিঁউকাহার ডাক শোনা যাচ্ছে। নোমান উঁকি ঝুকি দিয়ে পাখিটা দেখতে চেষ্টা করল। এই দিনে পিঁউকাহা ডাকে? বর্ষাকাল পিঁউকাহা ডাকার আসল সময়। এই পাখিটা একটু আগে আগে ডেকে ফেলেছে মনে হচ্ছে। বাচ্চা বয়সের পাখি। তাই গলার স্বর অত উঁচু না।
নোমানের চোখ পড়ল পাখিটার দিকে। সত্যিই কি অপূর্ব!
ধূসর রং গায়ে। তার উপর লালচে টান। বাংলা নামটাও সুন্দর। পাপিয়া। কবিরা এ নামের সৎ ব্যবহার করেছেন। দ্বিজেন্দ্রলাল লিখেছেন, ‘পাপিয়ার ঐ আকুল তানে, আকাশ ভুবন গেল ভেসে’। নজরুল তার সুবিখ্যাত গানে লিখেছেন, ‘কাঁদে পিঁউকাহা পাপিয়া, পরাণ প্রিয়া।’ কেউ কেউ এ পাখিকে পিউ কাঁহা বলে ডাকে। অর্থাৎ প্রিয়া কোথায়? মারাঠি ভাষায় এই মনোরম পাখিটিকে বলে পওসআলা, মানে গ্রীষ্মকাল আসছে। পাপিয়ার ইংরেজি নামটাও খুব ইন্টারেস্টিং, হক্-কাক্কু। আরো একটি নাম আছে ইংরেজদের দেওয়া, ব্রেইন ফিভার বার্ড।
নোমান হেঁটে হেঁটে সুকুমারের কাছে যাচ্ছে। তাকে সঙ্গে নিয়ে মানিক সরদারের কাছে যেতে হবে। অবশ্যই যেতে হবে। সুকুমার ভয় পেয়ে যেতে না চাইলে সে একাই যাবে। গিয়ে ছাত্তারদের সব কথা খুলে না বললে মানিক সরদার কিছু জানতে পারবে না। দুর্বল মানুষদের ওপর, হিন্দুদের ওপর যারা অত্যাচার করে তাদের কোনো দল নেই। তারা ক্ষমতাকে ব্যবহার করে মাত্র। মানিক সরদারের জানা উচিত। ওরা তলে তলে বিএনপির সঙ্গে আঁতাত করে ফেলেছে, এটাও জানাতে হবে। কিন্তু এই অসম্ভব মূল্যবান মুহূর্তটিকে অবহেলা করা যায় না, এমন দুর্ভাগা দেশ, পাখিশূন্য হয়ে যাচ্ছে। পাখিরা সভ্যতা পছন্দ করে। যে দেশ এখন যত সভ্য সে দেশে তত পাখি। অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট খেলার মাঠে পাখির ভিড়ে মাঝে-মধ্যে আন্তজার্তিক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও দু-চার মিনিট খেলা বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও পাখিকে ঢিল মেরে তাড়িয়ে দেওয়ার কথা সভ্য খেলোয়াড়দের মাথায়ও আসে না।
অথচ এই দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মতই পাখির অবস্থা। শিক্ষিত অশিক্ষিত কেউ পাখি শিকারকে অপরাধ মনে করে না! মনে করে পাখিও তরি-তরকারি। সুস্বাদু খাবার! এলজিইডি’র থানা ইঞ্জিনিয়ার সাহিদের কথা মনে পড়ে যায়। পাখি শিকারে তার খুব সুনাম আছে। সারা বছর তিনি সময় পেলেই বন্দুক কাঁধে নিয়ে মোটর বাইক চড়ে বের হন। পাখি শিকারের মূল সময় শীতের দিন। ওই সময় তিনি পাখি শিকারের জন্য পাগল হয়ে যান।
সাহিদ সাহেবের স্ত্রী রুবাইয়া। নোমানের ভার্সিটি জীবনের রুবাইয়াই এখন ভাগ্যচক্রে ইঞ্জিনিয়ার সাহিদের স্ত্রী। তাও আবার এই উপজেলাতেই। মাঝে-মধ্যেই রুবাইয়ার বাসায় যাওয়া হয়। দিনকয়েক দেখা না হলে রুবাইয়া নিজে চলে আসত নোমানের বাসায়।
গত শীতে রুবাইয়া ছোট একটা চিরকুট লিখে পাঠিয়েছে।
‘নোমান, দেখা নাই কেন? কোনো কারণে রাগ করেছিস? আমি তো জানি তুই রাগ করতে জানিস না। আজ সন্ধ্যায় একবার বাসায় আসবি? যদি ব্যস্ততা না থাকে। সি ইউ।’
সন্ধ্যায় নোমান গিয়েছিল। ঢুকতেই সাহিদ সাহেব অন্যদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। বললেন, ‘রুবাইয়ার বন্ধু, ভাইর্সটিতে ওরা একসঙ্গে পড়াশোনা করেছে।’ টিএনওসহ দু-তিনজন উপজেলা লেবেলের অফিসার দেখা গেল। তারা খাবার নিয়ে বেশি মশগুল। সাহিদ সাহেব ভীষণ খুশি। তাঁর জীবনে আজকের মতো পাখি খুব কম মারতে পেরেছেন। নোমান ঢুকে সেই গল্পই শুনতে পেয়েছিল। বন্দুকের এলজি গুলি ছুঁড়তে পাঁচটি বক এক সঙ্গে বিছিয়ে পড়েছে। আজ তিনি মোট চুয়াত্তরটি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি মেরেছেন। বিরাট এচিভমেন্ট!
ইউএনও সাহেব পাখির গোস্তপ্রেমী। অনেকদিন ধরে বলছিলেন পাখি খাওয়ার কথা। আজ সেই সুযোগ এসেছে। ইউএনও সাহেবের গোলগাল চেহারা। খেতে বসে তার ঠোঁটের চারপাশ তেলে চুপচুপ করছে। তিনি তৃপ্তির সঙ্গে খেতে খেতে বললেন, ‘যাই বলেন ভাই, সিপাই সিপাই ভাই ভাই, বকের উপর মাংস নাই।’
নোমান বলেছিল, ‘বুলবুলি, পাপিয়া, দোয়েল এসব পাননি?’
সাহিদ সাহেব বললেন, ‘বুলবুলি পেয়েছি দু-তিনটা। কিন্তু পাপিয়া পাই নাই, শীতের দিনে পাপিয়া চুপ মেরে থাকে। পাওয়া যায় না।’
রুবাইয়া জানে অতি সিরিয়াস কথাও নোমান হাসতে হাসতে বলে। তার স্বামীকে যে নোমান তিরস্কার করছে এটা সাহিদ না বুঝলেও রুবাইয়া বুঝতে পেরেছে।
সবাই বলল, ‘কী ব্যাপার আপনি খেতে বসুন।’
নোমান বলেছিল, ‘রাতের খাবার শেষ করেছি সন্ধ্যায়। আপনাদের সঙ্গে খাবার সৌভাগ্য হল না।’
রুবাইয়া জানে নোমানের চিন্তা। সে একবারও খাবারের কথা বলেনি।
খেয়েদেয়ে সবার বাড়ি ফেরার তাগিদ। বাঙালির কালচার। সাহিদ গেলে সবাইকে নামিয়ে দিতে।
নোমান রুবাইয়াকে ফাঁকা পেয়ে বলল, ‘তোর এই পাখিখোরকে আর মানুষ করতে পারলি না?’
‘এগুলো মানুষ হওয়ার না। দেখিস না একেকটার রুচি, শ্রী। আমার আব্বাও তো সিএসপি অফিসার ছিলেন। তাঁকে দেখেছি। এদেরকেও দেখছি। মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে ভাবি, এরাই সচিব হবে, রাষ্ট্রদূত হবে, বড় বড় দায়িত্ব পালন করবে। কী হবে দেশের?’
‘তুই যতটা ভাবছিস ততটা বোধ হয় না। দু-চারজন খুবই লার্নেড।’
‘বিচার তো আর দু-চারজন দিয়ে নয়। বিচার গড় দিয়ে। সেই গড় অবস্থা যে কী তা কিছুটা দেখি। বাদ দে এসব, ঢাকায় যাবি কবে?’
‘ঠিক নেই।’
‘এবার তুই যাবার সময় আমিও যাবো।’
দুষ্টামির হাসি দিয়ে নোমান বলল, ‘তোর স্বামী তোকে কিলিয়ে ভূত ছাড়াবে।’
রুবাইয়া দুহাত নেড়ে বলেছিল, ‘হারে বাদ দে, এগুলো নিয়ে ওর চিন্তা নেই। সারাদিন উপরি ইনকামের ধান্দা করে।’
‘এত ড্যাম কেয়ার করিস ক্যান? এটা ঠিক না।’
রুবাইয়া শুনে সিরিয়াস হয়ে উঠেছিল। রেগে গিয়ে মুখ কঠিন করে বলল, ‘শোন, আজ সকালে যখন পাখি ধরতে উঠে যায় তখন বললাম, তুমি যে পাখিটা মেরে আনবে, ও হয়তো খাবার সন্ধানে বের হয়েছে। ঘরে দুটো ছোট্ট বাচ্চা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে মা খাবার নিয়ে আসবে। মা আপ্রাণ চেষ্টা করছে খাবার জোগাড় করতে। ঠিক তখনই তোমার বন্দুকের গুলির ছোট টুকরা গিয়ে গায়ে বিঁধল। ধপাস করে মাটিত পড়ল। তুমি বেঁধে নিয়ে এলে। রান্না করে খেলে। একবার ভেবেছ ওর ছোট দুটি বাচ্চার দৃশ্য। আমিও দুদিন পর কিন্তু মা হবো।’
‘কী বলে?’
‘কিচ্ছু বলে না। কাপড় পড়েই চলেছে। তখন বললাম, যে দেশের আকাশে পাখি নিরাপদ নয়, সে দেশ নরক ছাড়া আর কি। তোমরাই দেশটাকে নরক বানাচ্ছো। আমাকে কী বলে শুনবি?’
‘কী বলে?’
‘মুখটা ভার করে বলে আরে রাখো তোমার সম্পদ! যে দেশে শত শত শিশু পাচার হয় মায়ের কোল খালি করে, যে দেশের পুলিশ সেই শিশু পাচারকারীদের কাছ থেকে শিশুপ্রতি হিসাব করে টাকা খায়, সেখানে পাখি নিয়ে দরদ দ্যাখানো ন্যাকামি ছাড়া কিছু না! এসব ন্যাকামি বাদ দাও!’
‘তার কথা তো একেবারে মিথ্যা না, রুবাইয়া। সবটুকু ফেলে দিতে পারবি না।’
‘পৃথিবীতে প্রতিটি অন্যায় কাজের মধ্যেই একটা না একটা যুক্তি দেয় অপরাধীরা,’ রুবাইয়া বলল, ‘চল ড্রইং রুমে চল।’
ওই ড্রইং রুমে বসেই রুবাইয়া একদিন হেসে বলেছিল, ‘নোমান, ভার্সিটির জীবনে তোকে আমার খুব পছন্দ হতো। তুই কি জানিস? প্রেম করতে ইচ্ছা করতো। কোনোদিন কারো কাছে বলিনি।’
নোমান সলাজ হেসে বলেছিল, ‘তাই নাকি, বুঝতে পারি নাই। বুঝলে আমিও হয়তো রাজি হতাম। ক্লাসের মেয়েদের মধ্যে তোকেই আমার সবচেয়ে ভাল লাগতো।’
কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে রুবাইয়া বলল, ‘তাহলে কেন আমার পেছনে একটু ঘুরলি না?’
‘তখন তো ঘুরলে ডাট দেখিয়ে সবাইকে বুঝিয়ে দিতিস, নোমান আমার পেছনে ঘোরে, আমি পাত্তা দেই না। ইজ্জত যেত আমার।’
নোমান আবার দুষ্টুমির ছলে বলল, ‘অল্প বয়সে স্কুল কলেজে এমন দু-একটি অব্যক্ত প্রেম সবার থাকে। এ নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। এরকম ভাললাগা অসম্পূর্ণ থাকে বলেই সারা জীবন মানুষের মনে হয়, ছাত্র জীবনটাই ছিল সবচেয়ে মধুর। ওই স্মৃতি নিয়ে মানুষ সুখ করে।’
‘কথা মিথ্যা না। রাতে শুয়ে শুয়ে মাঝে মাঝে আমিও কলেজ জীবনের না পাওয়া নিয়ে ভাবি। ভাল লাগে।’
রুবাইয়া এরপর খিকখিক করে হেসে বলেছিল, ‘বিছানায় শুয়ে মধুর এই ভাবনার রাজ্যে হঠাৎ দেখি কোনো কোনো দিন ইঞ্জিনিয়ারের হাত ঢুকে গেছে। তখন মনে হয় যেন দুটি স্লাই রেঞ্জ আমার শরীরের উপর কিলবিল করছে, হি হি হি।’
একটু থেমে রাবাইয়া বলেছিল, ‘এখনো তোকে আমি ভীষণ পছন্দ করি, প্রেম হয়নি তাতে কী?’
এসব এই তো গত বছরের কথা। হাঁটতে হাঁটতে নোমান মাইল দুয়েক পথ পার হয়ে এসেছে। বয়স্ক সূর্যটা পশ্চিমের আকাশে এখনো ঝুলে আছে। চারপাশে এখনো অন্ধকার নেমে আসেনি। পাখিদের ঘরে ফেরার আয়োজন চলছে। সূর্য তার গায়ের সমস্ত তাপ পৃথিবীর বুক থেকে তুলে নিয়েছে। একা প্রকৃতির কাছাকাছি এলে খালি কবিতা মনে আসে। এই মুহূর্তে কবিগুরুর চরণ মনে পড়ল –
সূর্যাস্তের রঙে রাঙা
ধরা যেন পরিণত ফল,
আঁধার রজনী তারে
ছিঁড়িতে বাড়ায় করতল।
নোমান সিগারেট বের করে ধরাল। আবার রাস্তা ধরে ফিরে চলল। রাস্তার বা পাশ ধরে হাঁটছে। এই পাশে বেশ অনেক দূর পর্যন্ত মাঠ। চৈতালী ফসল কাটা হয়ে গেছে। তাই মাঠে কোনো লোক নেই। রাস্তার ডানদিকে একটা বাঁশ-ঝোপের পাশ দিয়ে নেমে গেছে পায়ে হাঁটা পথ। এই পথই আবার গিয়ে উপজেলা বাজারে পড়েছে।
এই মাটির রাস্তা দিয়ে উঠে এল জনা পাঁচেক যুবক। বয়সে এরা সবাই নোমানের চাইতে বেশ ছোট। বিশ-বাইশ বছর হবে প্রত্যেকের। দু-একজনের হয়তো পঁচিশ-ছাব্বিশ হবে।
চোখে চোখ পড়তেই নোমানের কাছে কিছু একটা অস্বাভাবিক মনে হল। এদের সবাই মুখচেনা। নোমান নাম বলতে পারবে না। হেমেন কাকার বাড়ির মেয়েটাকে ধর্ষণের পর হত্যার নায়ক এরাই! সে আরো সন্দেহমুক্ত হল যখন চোখ পড়ল দূরে দাঁড়ানো ছাত্তার মোল্লার দিকে। এক হাতে লুঙ্গি ধরে আছে, আরেক হাতে মুঠি করে সিগারেট ধরে আছে। সে নিজেকে একটু আড়াল করার চেষ্টা করছে।
নোমানের একটু ভয় হল। পর মুহূর্তেই সে ভয় ঝেড়ে ফেলল। কী করেছে সে? চোখের সামনে এত বড় অন্যায় দেখে প্রতিবাদ না করলে সেই মানুষের জীবন বৃথা। সে প্রতিবাদের চেষ্টা করেছে মাত্র। হেমেন কাকাকে সঙ্গে নিয়ে থানায় কেইস করতে গিয়েছে। থানা সেই কেইসও নেয়নি। একটি জেনারেল ডায়েরি করেছে।
যে ছেলেটি সবার আগে এগিয়ে এল তার গায়ে শাদা টেট্রনের শার্ট। পরণে শ’খানেক টাকা দামের একটি ফুলপ্যান্ট। পায়ে হলুদ রঙের স্পঞ্জ। মাথার পাতলা চুলে খুসকি দেখা যাচ্ছে। সে টিপ্পনীর সুরে বলল, ‘নমস্কার দাদা, একটু আগুন দেন।’
পকেট থেকে প্রজাপতি মার্কা ম্যাচটি বের করে সে ছেলেটির হাতে দিল। নোমান টিপ্পনীটা ধরতে পাল। যেসব লোকেরা মুসলমান ঘরে জন্মগ্রহণ করে হিন্দুদের সঙ্গে বেশি চলাফেরা করে, তাদেরকে উপহাস করে প্রায়ই এমন ‘নমস্কার দাদা’ বলা হয়। এরই মধ্যে ছেলেগুলো নোমানকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে। ছেলেটা একটা সিগারেট ধরালো। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে পেছন দিকে থেকে তার ঘাড়ের ওপর প্রচণ্ড জোরে হকিস্টিক জাতীয় কিছুর বাড়ি পড়ল। নোমান পড়ে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিতে চেষ্টা করল। দ্বিতীয় বাড়ি পড়ল তার হাঁটুতে। মনে হল পট করে ভেঙ্গে গেল। প্রচণ্ড ব্যথায় পা অবশ হয়ে গেল। এরপর বৃষ্টির মতো বাড়ি পড়তে লাগলো তার পিঠে, কাঁধে। সে মাটিতে পড়ে যেতে থাকল। ঠিক সেই সময়ে তার চোখের উপর প্রচণ্ড একটা ঘুষি পড়ল। অন্ধকার হয়ে গেল সব কিছু। বড় আঘাতটা এল এর পরেই। কুড়ালের মতো কিছু একটা দিয়ে কে যেন তার তল পেটের বা পাশের দিকে কোপ বসিয়ে দিল। ভুস করে একটা অপার্থিব শব্দ শুনতে পেল নোমান। আর কিছু তার মনে নেই!