প্রবীর বিকাশ সরকার রচিত ‘রাহুল’ উত্তম পুরুষে লেখা একটি উপন্যাস। শুরুতে এটিকে স্মৃতিচারণ বলে মনে হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। কারণ উপন্যাসের শুরু থেকে ভাষাসৈনিক ও বিশিষ্ট রাজনীতিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও তাঁর পরিবারকে ঘিরে কাহিনীর সূত্রপাত। লেখকের বর্ণনা থেকেই বোঝাই যায় তিনি ওই পরিবারের সঙ্গে কীভাবে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের জীবন এবং তাঁর ব্যক্তিত্বের কিছু কিছু বিষয়ের আলোকপাতও হয়েছে গল্পের সূত্র ধরে।
এ উপন্যাসটিতে অনেক চরিত্রই স্বনামে এসেছে, যাকে নিয়ে এ গ্রন্থের নামকরণ তিনিও ধীরেন দত্তের নাতি। নাম রাহুল। তার নামেই উপন্যাসের নাম। গ্রন্থটি অনেকক্ষণ পড়ার পর মনে হবে এটি একটি উপন্যাস। এখানে লেখকের ব্যক্তিগত স্মৃতিই উপজীব্য হয়েছে। যদিও লেখকের নাম এখানে শুভেন্দু। দেখা যায় লেখক বাস্তবকে এবং সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন নিষ্ঠার সাথে। তিনি শিল্পের রং চড়াতে চাননি। তিনি স্মৃতির সততা রক্ষায় বেশি মনোযোগী ছিলেন। রাহুলের প্রতি তার দুর্বলতাও পরিস্ফুট হয়ে ওঠেছে। তাই রাহুলকে গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। এ কাহিনীতে রাহুল কখনো প্রত্যক্ষ কখনো পরোক্ষ কখনো অদৃশ্য ছায়ার মতো বিরাজ করেছে। তবে রাহুলের প্রতি লেখকের যে ‘অবলিগেশন’এবং যেভাবে রাহুলকে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করা হয়েছে সেটি পাঠকের কাছে পৌঁছেনি।
লেখক প্রবীর বিকাশ সরকার অনেক দিন থেকেই লিখে চলেছেন। ‘রাহুল’তার অন্যতম গ্রন্থ। রাহুলকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে কখনো কখনো শিল্পেরও ক্ষতি হয়েছে। তবে কাহিনীর মাঝে শেষতক চমক আছে। এ উপন্যাসের সবচেয়ে বড় দিক হলো ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং তাঁর পরিবার প্রসঙ্গ। রাহুলকে যারা চেনে তারা জানে রাহুলের মানসিক অবস্থা এবং বেড়ে ওঠা। স্বভাবতই লেখককে এ বিষয়টা বার বার টাচ করেছে, উদ্বেলিত করেছে। রাহুলের সূত্র ধরেই বার বার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাম এসেছে। লেখকের উদ্দেশ্যই ছিল রাহুল এবং ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পরিবারকে হাইলাইট করা তবে তিনি তা করতে পেরেছেন। কাহিনীর গতিধারায় খুব সহজভাবেই প্রসঙ্গটি এসেছে। তার দায়িত্ব হিসেবেই মনে হয় তিনি এ কাজটি করেছেন।
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রসঙ্গ মানুষের কাছে নানাভাবেই আসা উচিত। প্রবীর সে চেষ্টা করেছেন, এজন্য একজন পাঠক হিসেবে অবশ্যই তাঁকে ধন্যবাদ জানাবো। তবে ধীরেন দত্তের জীবন নিয়ে উপন্যাসটি করতে পারলে প্রবীর বিকাশ বড় একটি কাজের দাবিদার হতে পারেন। এ উপন্যাসটিতে মাত্রাযুক্ত হয়েছে ধীরেন দত্তের প্রসঙ্গ। লেখক তাই চেয়েছেন।
রাহুলকে ঘিরে কাহিনী সবসময় আবর্তিত হয়নি তারপরও রাহুল এসেছে গুরুত্বের সাথেই, কাহিনীর শেষেও রাহুলকে দিয়েই শেষ করা হয়েছে। শুভেন্দু ও স্বর্ণ প্রসঙ্গটি পাঠককে চমকে দিবে। গ্রন্থটি পড়তে ভালোই লাগবে। সংলাপও যুৎসুই হয়েছে তাই নাটকীয়তা মন্দ নয়।
ঢাকার চৈতন্য থেকে প্রকাশিত এ উপন্যাসটি পাঠকপ্রিয়তা লাভ করুক এ প্রত্যাশা করি।
1 Comments
Sanjoy Sarkar
বাংলাদেশের উপন্যাস নিয়ে সমালোচনার বই।