নব্বই দশকের অনেক সাংস্কৃতিক পটপরিক্রমার একটা গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন ছিল বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীত। গিটারকেন্দ্রিক একটা উঠতি তরুণ সমাজের খোঁজ যারা তখন রেখেছিলেন তারা জানেন, সঙ্গীত-সম্পর্কিত জীবন যাপনের যে সাবেকি ধারণা হাজির ছিল, তা থেকে গিটারকেন্দ্রিক এই তরুণ সমাজ যাপনের অনুষঙ্গকে ভিন্নভাবে উপলব্ধি করতে শুরু করেছিল। ফলত নাগরিক অভিজ্ঞতার মধ্যে তরুণদের এই উত্রাসী উম্মাদনা উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক; তথাপি রাজনৈতিক ঘটনাও বটে। নব্বইয়ের নাগরিক ও মফস্বল ভিত্তিক মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেদের মধ্যে থেকে এই চর্চা শুরু হয়। গুটিকয় ছেলে উচ্চবিত্ত ঘর থেকে এলেও তখনকার ঢাকা শহরের যে মফস্বলীয় নাগরিক বাস্তবতা, তার মধ্যে তরুণ এই গোষ্ঠীটি এক অমোঘ জীবন যাপন করে এসেছে। এরপর ২০০০-পরবর্তী আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডের জোয়ার, অন্যান্য ইলেক্ট্রিক বাদ্যযন্ত্রের সহলভ্যতা আর অডিও রেকর্ডের আধুনিকায়নের ফলে ব্যান্ডসঙ্গীত এক নতুন আঙ্গিকে প্রতিভাত হতে থাকে। এখন হাজার তরুণ ইউটিউবে টিউটরিয়াল দেখে গিটারকে জীবনের অনুষঙ্গ করে নিয়েছে। কিন্তু নব্বইয়ের গিটারকেন্দ্রিক তরুণদের জীবনটা খুব বেশি সহজ ছিল না; পালাবদল ছিল, উঠানামা ছিল, ভাঙচুর ছিল, টালমাটাল ছিল।
এই গল্প শুনে আমি বড় হয়েছি। এসব জীবনের আশপাশ দিয়ে হেঁটে এসেছি। নিজের মধ্যেও অভিজ্ঞতা করেছি। বারবার ভেবেছি এই সময়ের আখ্যানটি লিখে রাখা দরকার। গত বছর বণিকবার্তা সিল্করুট ঈদসংখ্যা ২০১৭ হাতে নিয়ে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে গল্প উপন্যাসের নাড়ী পরীক্ষা করছিলাম। পাতা উল্টাতে উল্টাতে একটা বাক্যে এসে হৃদয় আটকে গেল,
“শিপলুর গিটার শিপলুর কথা শুনছে না। কোনো বাদ্যযন্ত্র বাদকের কথা শুনছে না; উলটো কিনা নিজেই বেজে চলেছে নিজের পছন্দমতো – এটা কখনো হয়?”
পড়তে শুরু করলাম ফয়জুল ইসলামের ‘বয়েজ স্কুল ব্যান্ড’। দুর্দান্ত উপন্যাস। ঈদ সংখ্যায় উপন্যাসটি সংক্ষেপিত রূপে প্রকাশিত হয়েছিল। এবারের বইমেলায় বই আকারে প্রকাশ পেল। ঢাকা শহরের মহল্লা সংস্কৃতির ভেতর বেড়ে ওঠা দিশেহারা ক’জন বিষণ্ণ যুবকের ব্যান্ড দল গঠন, জীবিকার ঘূর্ণাবর্ত, গড্ডলিকা সংস্কৃতির ঘেরাটোপ আর হৃদয় ঘটনার আখ্যান ‘বয়েজ স্কুল ব্যান্ড’।
উপন্যাসটি নিয়ে বিশেষ বিস্তারে গেলাম না। আমার মনে হয়েছে, ঘাসটি ঘোড়ার মুখেই খান। আমি শুধু প্রেক্ষাপটটি বলে আপনাদের আগ্রহ ও দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। ফয়জুল ইসলাম ভাইয়ের জন্য শুভ কামনা। বইটি প্রকাশ করেছে পার্ল পাবলিকেশন্স। প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ।