অন্য আলো
কামাল রাহমান
৪
অসাধারণ এক গ্রীষ্ম এসেছে এবার বিলেতে, তাপমাত্রা খুব বেশি ওঠে না, বৃষ্টিপাত নেই। এতো ফুল ফুটেছে, বাতাসে পলেনের পরিমান খুব বেড়ে গেছে, অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। হেইনের ধরেছে হে-ফিভার, আমার সারা শরীর লাল হয়ে যায় রোদে গেলেই, কিন্তু অবাধ আলোর বন্যা, প্রকৃতির এতো রং, মানুষের এই প্রাণচঞ্চলতা ছেড়ে ঘরে বসে থাকাও যায় না।
এর মধ্যে ছোট্ট একটা খবর জানিয়ে বড় ধরনের এক আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দেয় এলিনা, হতে পারতো এটা সুসংবাদও, কিন্তু দুঃসংবাদের মতোই মনে হয় এখন এটা। সবার আগে আবীরের পরামর্শ নেই। ও বলে, বিয়ে করে ফেল। সমাধানটা তো এতো সহজ নয় রে আবীর! এলিনার সঙ্গে সম্পর্কটা অনেক গভীরে পৌঁছেছে, কিন্তু এর প্রায় সবটাই শারীরিক, দু জনেরই শরীর শিথিল হবে এক সময়, তখন সম্পর্কটা কোথায় যেয়ে দাঁড়াবে? পাশ্চাত্যে বাস করেও আমার আদি ও অকৃত্রিম বাঙালি প্রাণটাকে তো বাতিল করতে পারি নি, বিয়ে করাকে জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় মনে করি এখনো। ভালো হলে ভালো, না হলে আবার চেষ্টা করার মধ্যে নেই আমি। স্ত্রীকে শুধু শরীরসঙ্গী হিসেবে চাই না, আজীবনের বন্ধু, সুখে দুখে, হাসি কান্নায় সব সময় একান্ত প্রাণের সহচরী হিসেবেও চাই। এলিনা তা হতে পারবে না কখনো।
মানসিক এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া হয় না। ঘরে কাটাই প্রায় সবটুকু সময়। বিপর্যস্ত দিনগুলোয় হালকা সুরা পান, বিশেষ করে হোয়াইট ওয়াইন, ও সকল সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনা, সহজ ও জটিল সব মুহূর্তের আশ্চর্য প্রেরণাদাতা ও রক্ষাকর্তা আমার গুরুর গান শুনি: ফেলিলে একি বিষম দায়ে…
পরদিন হেইনের শরণাপন্ন হই। সব শুনেটুনে বলে –
এতো ভাবাভাবির কি আছে, ঝুলে পড়ো।
আমি কি ঝুলে পড়বো, সেই তো ঝুলে আছে আমার সঙ্গে!
বিয়ে করতে চাইলে করে ফেলো, না চাইলে ক্লিয়ার করে ফেলো।
আমার কাছে না ওটা, যে ক্লিয়ার করে ফেলবো।
জিজ্ঞেস করেছো ওকে?
ক্লিয়ার করার কথা জিজ্ঞেস করি নি।
তাহলে রেখে দাও।
তোমাকে বোঝাতে পারছি না হেইনে, আমাদের কমিউনিটিতে এটা খুব খারাপ ধরনের অপরাধ।
এলিনা কি বলে?
বিয়ে করে ফেলতে।
তাহলে দুটোর একটা তো করতে হবে, অথবা ফেলতে হবে, অথবা দুটোই।
বিপদে ফেললে হেইনে।
বলো কি, বিপদে ফেললাম আমি?
না না, ওভাবে মিন করি নি।
বুঝেছি ডাউ, ঠাট্টা করলাম।
সত্যি বুঝতে পারছি না, কি করবো।
অস্থির হয়ো না, সব কিছুরই কোনো না কোনো সমাধান আছে।
সত্যি?
তাই তো জানি।
চুপ করে থাকি অনেক্ষণ। কিছু একটা ভাবছে হেইনে। আমার মন বলে, ওটাকে ফেলে দেইও বা কীভাবে! আমার প্রথম শরীরশিল্প, একটা প্রাণের প্রথম উল্লাস! উন্মেষ, প্রথম সৃষ্টি! এটা ধ্বংস করে ফেলা! আতঙ্কে শিউরে ওঠে শরীর, কি বিপদে ফেলেছো হে ভগবান! হেইনের কথায় চেতনা ফিরে আসে।
এক কাজ করো ডাউ, বিকেলে আমার কাছে নিয়ে আসো ওকে, আমার এক বন্ধু, গাইনি, প্রাইভেট ক্লিনিক আছে ওর লিভারপুলে। স্বাস্থ্যের অবস্থাটা দেখি ওর, যে-কোনো কিছু ভাবার আগে প্রথমে নিশ্চিত হতে হবে, কোথায় আছি আমরা। জানো ওটার বয়স কত?
ও বলেছে দু হপ্তা পেরিয়েছে স্বাভাবিক ঐ সময়ের।
ঠিক আছে, অসুবিধা নেই। বিকেলে নিয়ে আসো।
দেখি।
ওর কি ইচ্ছা?
ও তো চায় বিয়ে করে ফেলি।
ওটাই স্বাভাবিক।
ওর পক্ষে।
ঠিক আছে, বিকেলে আসো, দেখা যাক কি করা যায়। আর একটা বিষয় বুঝে উঠতে পারছি না, এটা হয় কীভাবে? এ রকম অপরিকল্পিত ঘটনা সাধারণত টিন-এজারদের মধ্যে ঘটে। পরিণত বালক-বালিকারা তো পরিকল্পনা করে এটা করে।
কিছুই জানায় নি আমাকে এলিনা।
নিরোধ নাও নি কেন?
শুরু থেকেই নিশ্চিত করেছে আমাকে, সেই নাকি নিচ্ছিল ওটা।
তাহলে ঘটেছে কীভাবে এটা?
আমি বলবো কেমন করে?
ও, আমি বলতে পারবো।
ফাজলেমো করছি না আমি।
ঠিক আছে, আমি করছি… এখানে এসব কিছু ঘটে গেলে, হয় ওরা বিয়ে করে নেয়, না হয় ক্লিয়ার করে। এমনকি বিয়ে না করেও বাচ্চা নিয়ে নেয়। অনেক সময় ছেলেটা পিতৃত্ব স্বীকার করে নেয়, আবার কখনো নেয়ও না। কি আসে যায় তাতে?
আমাদের সমাজে এটা চলে না, বুঝতে চেষ্টা করো হেইনে। আমরা এখনো ঐ অবস্থায়ই আছি।
আমি তো মনে করি বরং ভালো অবস্থায়ই আছো।
হয়তো।
যাহোক, একটা কিছু ভেবে দেখবো, একটু সময় দাও, প্লীজ। তোমার এ বিষয়টা আমার কাছেও অভিনব।
ঘরে এসে বসে থাকি জানালায় চোখ রেখে, ক্ষুধা লেগেছে, খেতে ইচ্ছে হয় না, আকাশ পাতাল ভেবেও কূল পাই না। দুপুরের দিকে দরোজায় টোকা। আতঙ্কিত হই, এলিনা নিশ্চয়, কি বলবো এখন ওকে? দরোজা খুলে দেখি, হেইনে! ঘরে ঢুকেই বলেÑ
তোমার জন্য খুব ভালো ব্র্যান্ডের একটা সিগারেট এনেছি।
কৌতুকের সময় এটা! মনে মনে রেগে যাই। প্রাইম টাইম সিগারেটের একটা প্যাকেট খুলে ধরে। কিছু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয় না।
সিগারেট দিতে আসো নি নিশ্চয়, হেইনে।
জানালা খুলে চেয়ার টেনে বসি ওখানে, সিগারেট ধরিয়ে জিজ্ঞেস করি –
বলো হেইনে।
ক্ষুধা লেগেছে ডাউ, সিগারেটের বিনিময়ে কিছু খাবার আশা করতে পারি না?
পারো পারো, নিশ্চয় পারো।
ফ্রিজ খুলে দেখি মেক্সিকান ফাহিতার প্যাকেট আছে একটা। গ্রীন পেপার, চেরি টমেটো ও রেড অনিয়ন দিয়ে স্টা’র ফ্রাই করে রুটিতে রেপ করে দেই। আমিও নেই একটা। দু কাপ কফি নিয়ে খেতে বসি। চুপচাপ খেতে থাকি। হেইনের চোখের কোনায় সেই অলৌকিক, দুষ্টু হাসিটা লেগে রয়েছে। মনে মনে কিছুটা স্বস্তি পাই, নিশ্চয় কিছু একটা ভেবে বের করেছে, না হলে ওটা থাকতো না ওখানে, রুটি শেষ করে বলি –
বলো হেইনে।
কি?
আমাকে টেনশানে না রাখলে শান্তি লাগে না তোমার?
কি কারণ আছে এটার বলো তো?
না, কোনো কারণ নেই, বলো এবার।
ঠিক আছে বললাম, ধন্যবাদ তোমাকে, সুখাদ্য পরিবেশনের জন্য। যাই এবার, আশা করি দেখা হবে বিকেলে।
সত্যি উঠে পড়ে চেয়ার থেকে। দ্বিধায় পড়ি, লিভিং রুমে যেয়ে ফিরে দাঁড়ায়, হাসি মুখে বসে ওখানে, বলে –
বিকেলে এসো না ডাউ। আরেকটু ভেবে দেখলাম, তোমাকে একটু অভিনয় করতে হবে, আমাকে নিশ্চিত হওয়ার জন্য।
কি সেটা?
ওকে নিয়ে আমার এখানে আসার আগে খুব হাসি খুশি কিছু সময় কাটাও একসঙ্গে, এবং বলো বিয়ের কথা। বিয়ের বিষয়ে সব রকম কথা বলো, সম্ভাব্য একটা তারিখও ঠিক করে ফেলো, এজন্য কীভাবে এগোবে পরিকল্পনা করা শুরু করো। তারপর যখন মনে করো পুরোপুরি আস্বস্ত সে তোমার উপর, তখন বলো যে, শারীরিক কিছু চেকআপ করা খুব জরুরী, খুব নির্ভরশীল তোমার একজন বন্ধু আছে লিভারপুলে, গোপনে সব কিছু সেরে দেবে, তারপর ওকে নিয়ে যাও ওখানে। কথা বলে রাখবো আমি। আমার কথা কিছু বলো না, তাহলে সম্মত নাও হতে পারে ও।
এটা কি ঠিক হবে হেইনে, প্রতারণার মতো হয়ে যায় না?
দেখো ডাউ, সব কিছু এখন বলতে চাই না তোমার কাছে, আমাকে যদি বিশ্বাস করো, তাহলে এটার দায়িত্ব আমার।
কিছু ভাবতে পারছি না হেইনে।
আস্থা রাখতে পারো আমার উপর। কোনো ক্ষতি হোক তোমার এটা কখনোই চাইবো না আমি।
জানি হেইনে।
ঠিক আছে, যাই এবার।
ওকে, বাই।
সি ইউ এগেইন।
সি ইউ হেইনে।
বুকের ভেতর অনবরত কাঁটার খোঁচা সহ্য করেও হেইনের পরামর্শ মতো অভিনয়টা করে যাই। মনে মনে খুশি হই, অভিনয়ে অবিশ্বাস্য পারদর্শিতা আমার। পরদিন বিকেলে লিভারপুল যাই। সবকিছু ঠিকঠাক মতো চলে, বুকের পাথরটা মুহূর্তের জন্য নামিয়ে রাখতে পারি না। আবীর ও হেইনে, দু জনে আপ্রাণ চেষ্টা করে আমাকে হালকা হাওয়ায় ভাসিয়ে রাখতে। দু দিন পর টেস্ট-রেজাল্ট পেয়ে মনে হয় শাব্দিক অর্থেই ওজনশূন্য হয়ে পড়েছি।
এলিনাকে দেখে বোঝা যায় না কিছুই, খুশি না হতাশ! আমার মতোই হালকা হয়ে নিঃশ্বাস নেয় আবীর। বলে –
বড় একটা ভাবনা থেকে রেহাই দিয়েছিস দাউদ।
তাই আবীর, তাই।
চল এটা সেলিব্রেইট করি।
অবাক হই। বলি –
উল্টোটাই সেলিব্রেইট করে মানুষেরা।
হ্যাঁ করে। যখন ইচ্ছায় হয় ওটা, এখন আমরা না-হওয়াটা সেলিব্রেইট করবো।
ঠিক আছে, কর।
আউয়াল আসুক, ওকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাবো।
কবে আসবে ও?
আর বলিস না, আট মাস হয়েছে দেশে গেছে, এখনো আসার খবর নেই, ফোন করেছিল গত হপ্তায়। আগামী মাসের তিন তারিখে ফ্লাইট।
ভালোই হলো, যাক।
দেশে যেয়ে কি থাকা যায়, বল?
ইচ্ছে থাকলেও পারা যায় না, প্রতিদিনই এটাকে আরো খারাপ করে তুলছি আমরা।
অস্থির হোস না, মানুষের ইচ্ছে নদীর মতো গতিশীল। ক্রমাগত অবদমন ভীষণ চাপের মুখে রেখেছে এসব, কোনো না কোনো ফুটোফাটা দিয়ে বেরিয়ে আসবেই একদিন।
আমরা কি জানি আমাদের ইচ্ছেগুলো কি?
তোমার আমার হয়তো অনেক জটিল ইচ্ছেও আছে। সাধারণ মানুষের ইচ্ছে তো অতি সরল, একটু সহজ একটা জীবন।
মাথাপচা স্থুলবুদ্ধি রাজনীতিবিদদের হাত থেকে নি®কৃতি কি পাবে ওরা সহজে?
নিশ্চয় পাবে।
আমাদের মধ্যে জাতীয়তাবোধটাই তো গড়ে উঠতে পারছে না। সরকারী শব্দটাই হয়ে গেছে ‘ফেলনার’, ওটাও যে ‘আমার’ এবং অনেক বড় করে আমার, এটাই তো বুঝতে দেয়া হচ্ছে না আমাদের।
জাতীয়তাবোধ গড়ে উঠবে কীভাবে? বাঙালি জাতীয়তাবোধের শৈশবেই তো কোথাকার এক দালাল এসে এক কোপে ওটাকে বাংলাদেশী বানিয়ে ফেলেছে! এর পরের ইতিহাস তো খুনোখুনির, পাল্টাপাল্টি প্রতিশোধের, রাজপরিবারের প্রতিহিংসার। এ পর্বটা শেষ হলেই দেখবি শুভযোগ ঘটবে।
আশা যেনো পূর্ণ হয় তোর, একটা কাজের কাজ যেনো করতে পারে বাঙালিরা।
এখন হয়তো এটা সম্ভব না, এখন তো ওদের দুটো হাতই ব্যস্ত, কাজ করবে কি দিয়ে?
বুঝি নি।
ওদের একটা হাত ব্যস্ত সামনের জনের ওখানে গুঁতোতে, আর দ্বিতীয়টা পেছনে, নিজের ওখানটা বাঁচাতে।
হো হো হো।
কথাটা সত্যিই হাসির না। বেশির ভাগ মানুষই এখন ও কাজে ব্যস্ত।
যাকগে, কি কথা থেকে কি কথা এসে গেলো।
তাই তো দেখি।
এখন একটু হোক।
হোক।
কোথায় যাবি?
চল, একটা পাবে যাই।
চল।
কাউলিতে যাই। পাবে যেয়ে ভুলে যাই সব।
নিয়মিত যাওয়া শুরু করি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনার ক্ষতিটুকু সারিয়ে তুলতে মন দেই। ফিরে আসে আগের দিনগুলো, রোদে গলা পিচের মতো লেগে আছে এলিনা, যেখান দিয়েই হেঁটে যাই, ছাপ পড়ে যায়। কি করি বুঝতে পারি না। এটারও সমাধান হেইনে ছাড়া দিতে পারে কে আর? বলে –
হঠাৎ করে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো না, হিংস্র হয়ে উঠতে পারে সে, বেরিয়ে আসার চেষ্টা করো, ধীরে ধীরে।
সে চেষ্টাই তো করছি হেইনে, পারছি না।
কি বলে ও।
একই কথা, বিয়ে করে ফেলতে।
না অন্য কিছু।
অন্য কিছুটাও চাই না।
বলো কি, অমন অপ্সরী থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও কীকরে?
বুঝতে, আমার অবস্থায় পড়লে।
সুযোগ করে দাও না, পড়ে দেখি।
হেইনে, তোমার খালি ফাজলামো।
তাই কি?
চুপ করে থাকি। আবার বলে –
একটা স্ট্রং ডোজ দেই তোমাকে, এক কাজ করো, আরেকটা প্রেম করে ফেলো, দেখবে সুর সুর করে পালাবে।
তোমাকে বোধ হয় গালাগাল দেয়া শুরু করতে হবে।
বিশ্বাস করো, এটা একটা ভালো অষুধ, প্রথমে হয়তো ওর সঙ্গে একটা ফাইট দেয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু তোমার দ্বিতীয়জন খুব স্ট্রং, জায়ান্ট, সম্ভব হলে আফ্রিকান নেবে, যেনো শিং দিয়ে গুঁতিয়ে তাড়িয়ে দিতে পারে।
তোমার সঙ্গে আর পারা গেলো না হেইনে!
কি করবো বলো, কোনো মানুষই অষুধ পছন্দ করে না প্রথমে, তারপর যখন কাজ করতে শুরু করে ওটা, চালিয়ে যায়। প্রেমিকাকে ভালোবাসে মানুষ সবার আগে, ডাক্তারকে সব কিছুর পরে।
শোনো হেইনে, আমাদের দেশে একটা কথা আছে, নেড়া একবারই বেলতলায় যায়।
বুঝি নি।
বোঝার দরকার নেই।
তাহলে এক কাজ করো, ওর পেছনে তোমার চেয়েও বেশি সক্ষম আরেকজন লাগিয়ে দাও।
উঠি হেইনে।
না না, বসো ডাউ। একটু ভাবতে দাও।
ঠিক আছে, যাই এখন।
আচ্ছা শোনো, এ মুহূর্তে দুটো মাত্র বিকল্প পেলাম ভেবে, আরো বেশি পেলে পরে জানাবো।
কি ও দুটো?
প্রথমটা, ওকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে আমার হাতে তুলে দিতে পারো কিনা ভেবে দেখো, নিশ্চিত থাকো, খুব ভালোভাবে যত্ন নেবো ওর। দ্বিতীয়টা, লম্বা হলিডেতে কোথাও যেতে পারো কি না দেখো।
ধন্যবাদ, অনেক ধন্যবাদ তোমাকে, ড. লিস্টেনবর্গ!
বেরিয়ে আসি ওর ওখান থেকে, ওর ঐ বিখ্যাত বা কুখ্যাত হাসিটা যে আমার ঘাড়ের পেছনটায় ছড়িয়ে রয়েছে এখন, বুঝতে পারি। বাইরে এসে মনে মনে ভেবে দেখি লম্বা ছুটিতে যাওয়ার পরামর্শটা মন্দ দেয় নি। একটু একটু করে সময় কম দেয়া শুরু করি এলিনাকে। অস্থির হয়ে ওঠেছে, এর পর আর একবারও বিছানায় যাই নি, যাওয়ার প্রশ্নই আসে না, দু বার বেলতলায়? ঝাঁকড়া চুল নিয়েও যেন কেউ না যায়, ভগবানের দিব্যি।
মাসখানেক কেটে যায় এভাবে, এলিনা বুঝতে শুরু করেছে যে এড়িয়ে চলেছি ওকে, বিয়ে করার জন্য চাপ দিতেই থাকে। একদিন কেঁদেকেটে বলে, সত্যিই আমি বাঁচতে চাই না তোমাকে ছাড়া। শেষ পর্যন্ত ওকে বলে ফেলি, এটা সম্ভব না কোনোভাবেই। দু জনের সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থা ভিন্ন, বিয়েটা আজীবনের বন্ধন, ছেলেখেলা নয়, বা শরীরের চাহিদা মেটানো নয় শুধু।
এরপর প্রায় মাসখানেক কেটে যায়। ইউনিতে আসা ছেড়ে দিয়েছে এলিনা। দুঃশ্চিন্তাটা আরো গভীর হয়, কোথায় যে জড়ালাম, ভালো লাগে না কিছু, কিভাবে কি হয়ে গেলো! একদিন ফোন পাই ওর বাবার কাছ থেকে। পরিচয় দেয়ার পর বলে, ওদের পরিবারে একটা ভয়ানক বিপর্যয় ঘটে গেছে। ইউনিতে একসঙ্গে পড়াশোনা করে এমন কারো ফোন নাম্বারই নাকি নেই ওদের কাছে, একমাত্র আমার ফোন নাম্বার দিয়েছে যোগাযোগ করার জন্য। গত চারদিন থেকে হাসপাতালে আছে ও, সম্ভব হলে বিকেলে ভিজিটর্স আওয়ারে দেখা করতে পারলে খুব খুশি হয় ওরা।
সঙ্গে সঙ্গে সম্মতি জানাই। বিকেলে হাসপাতালে যেয়ে দেখি অন্য এক এলিনা, মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা। প্যান্টোমাইমের মুখের মতো ফ্যাকাসে, সাদা একটা মুখ, চোখের কোল কুচকুচে কালো, ডাইনিদের মতো। অতিরিক্ত ঘুমের অষুধ খেয়ে এ অবস্থা করেছে। সময় মতো হাসপাতালে আনতে পারায় যমে-মানুষে টানাটানি করে রক্ষা করতে পেরেছে। ওর বোনকে বলে একটু একা কথা বলতে দেয়ার জন্য। ও চলে গেলে বলে – তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম ডাউ, একটা মানুষের জীবন চেয়েছিলাম, মুক্ত মানুষের। তোমাকে ছাড়া মরতে চেয়েছিলাম। সব কিছু থেকেই মুক্ত হতে চেয়েছিলাম। দু’টার কোনোটাই হলো না, যদি বেঁচে থাকি, অথবা থাকতে হয়, জীবনের বাকিটা অন্য কিছু, আমি জানি না, তবে সেটা জীবন নয় আর। এখন যেতে পারো, আমার প্রতি কোনো দায় নেই তোমার। কিছু বলতে চাই, মুখ খোলার চেষ্টা করতেই ডেকে নিয়ে আসে ওর বোনকে। নিঃশব্দে বেরিয়ে আসি। মনে মনে বলি –
বিদায় এলিনা!
ভীষণ মন খারাপ হয়ে থাকে, কোনো কিছুতেই শান্তি পাই না। এলিনার হাত থেকে ছাড়া পেয়েও না। এখন মনে হয় মেয়েটা সত্যিই ভালোবেসেছিল আমাকে। দেশ থেকে আউয়াল এসেছে, বকবক করে দেশের অনেক ভালো ও মন্দ কথা শোনায়, অন্য সময় হলে হয়তো খুব মন দিয়ে শুনতাম এসব, উপভোগ করতাম, এখন ভালো লাগে না, ওকে সহ আবীর একদিন আয়ারল্যান্ডের পথে বেরিয়ে পড়ে আমাকে নিয়ে। মনের গ্লানি কাটে না, এতো গভীরে ছড়িয়ে পড়েছে এটার শেকড়, কোনোভাবেই উপড়ে উঠিয়ে আনা সম্ভব হয় না।
মাস দুয়েক পর আবার এলিনার বাবার ফোন। বলে, খুব বিপদে পড়ে ফোন করেছে, লন্ডনে চলে গেছে এলিনা, সম্ভবত কালো কোনো ক্রিমিন্যালের খপ্পরে পড়েছে। যে ঠিকানা দিয়েছে ওখানে দেখা করতে যেয়ে দু দিন ব্যর্থ হয়েছে ওরা। পুলিশে বলতেও সাহস পাচ্ছে না, যদি আবার কোনো অঘটনের চেষ্টা করে। আমি কোনো সাহায্য করতে পারি কি না, ওর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের মধ্যে একমাত্র আমাকেই চেনে সে, এজন্য অনুরোধ জানাচ্ছে। আমি বলি, ওর সঙ্গে আমারও তেমন আলাপ ছিল না, ক্লাশমেইট হিসেবে মাঝে-মধ্যে দেখা হয়েছে ইউনিতে, এতটুকুই। সে বলে, বিশ্বাস করে আমাকে, কিন্তু ওর বন্ধুদের অন্য কাউকেই সে চেনে না। অগত্যা ওর কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে লন্ডনে যাই। ঐ ঠিকানায়ই থাকে সে, কিন্তু ওর সঙ্গে দেখা হয় না। দৈত্যের মতো এক আফ্রিকান বেরিয়ে এসে বলে, জানি সত্য বলে নি, এলিনা ঘরে নেই, ঠিকানা বা ফোন নাম্বার রেখে যাও, সে যোগাযোগ করবে, কোনো মেসেজ থাকলে দিতে পারো। শুধু আমার নাম বলি, ও এলিনাকে ফোন করতে বলি। ঐ ফোন আর আসে না কখনো। এদিকে অস্থির হয়ে উঠেছে এলিনার বাবা। এটাই স্বাভাবিক।
মুক্ত হয়েও মুক্তি মেলে না, কেমন এক গ্যাঁড়াকলে ফেঁসে গেছি! হেইনেকে জিজ্ঞেস করিÑ
বল দেখি এখন কি করি, ভায়া?
সত্যি চাও এখান থেকে বেরিয়ে আসতে?
ঠাট্টা মনে হয় হেইনে?
তাহলে ওকে আমার হাতে তুলে দাও। আগেও বলেছি।
ও কি একটা চকোলেটের প্যাকেট?
তুমি দিচ্ছো কিনা তাই বলো।
আমার উচ্ছিষ্ট কীভাবে তোমার হাতে তুলে দেই।
ওভাবে দেখা উচিত না।
জানি না হেইনে, কীভাবে দেখা উচিত।
তোমার পুরোনো পোশাক পরি নি কখনো?
ও তো কোনো পোশাক বা সামগ্রী নয় হেইনে।
মোটেও বোঝাতে চাই নি তা। ভালোবাসার ধন সে। তুমি কতটুকু জানি না, আমার মনে হয় সমস্ত মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছিল সে তোমাকে। এখন দেখি, যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে, আমি নিংড়ে নিতে পারি কিনা।
ঠিক আছে, তোমার যা খুশি।
লন্ডনের ঠিকানাটা দাও তো।
আমার কাছে যেটা ছিল, দেই। পরের দিন সন্ধ্যায় এসে রাগে ফেটে পড়ে হেইনে।
আমি ভাবতেও পারি নি এমনটা করবে তুমি!
কেন, কি হয়েছে?
ওটা ভুয়া ঠিকানা, এক কালো বদমাশ থাকে ওখানে, প্রায় হাতাহাতির পর্যায়ে চলে গেছিল অবস্থা।
আমি যা জানি, তাই দিয়েছি।
ইউ আর এ লায়ার।
টং করে রক্ত চড়ে যায় মাথায়।
নট মি। ইউ আর এ স্নব।
এতো বেশি রেগে যেতে দেখি নি কখনো ওকে। শীতল রক্তের মানুষ, হিস্টিরিয়া রোগীর মতো কাঁপতে থাকে। উঠে যেয়ে বলে –
আই এম সরি, এন্ড গুড বাই।
গেট লস্ট।
সব কিছু ভুলে থাকতে চেষ্টা করি। ধীরে ধীরে জীবন স্বাভাবিক করে আনার চেষ্টায় প্রাণপাত করি। মাসখানেক পর সোয়া-ছয়-ফুট আবার এসে হাজির।
সেদিনের দুর্ব্যবহারের জন্য দুঃখিত ডাউ।
অসুবিধা নেই, বলো।
সত্যি দুঃখিত।
ঠিক আছে। আমিও দুঃখিত।
সব ঘটনা খুলে বলে হেইনে। বড় একটা নাটক ঘটে গেছে এর মধ্যে। ঠিকানা ওটা ঠিকই ছিল। এই এক মাস ধরে নিজেই এক গোয়েন্দা হয়ে উঠেছিল হেইনে, ঐ ঠিকানা থেকে সরিয়ে ফেলেছিল এলিনাকে। সম্ভবত একটা ট্রিপল এক্স মুভির চরিত্র বানিয়ে ফেলার জন্য এলিনাকে টার্গেট করেছিল ওরা। ঐ কালো শয়তান ওকে বিক্রি করে দেয় একটা গ্র“পের কাছে। অনেক টাকা পয়সা খরচ করে বিভিন্ন সূত্র ধরে শেষ পর্যন্ত ওকে উদ্ধার করেছে হেইনে। এ যেন বলিউডের এক গোয়েন্দা কাহিনী, ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যায় এটা নিয়ে। এখন এলিনা রয়েছে হেইনের বাসায়, দু জনেই ডুবে আছে দু জনের সব ধরনের প্রেমে। খুব খুশি হেইনে। এ সুসংবাদটা দিতে এসেছে।
হেইনের ওখানে ওকে দেখতে যাওয়ার অনুমতি কাউকেই দেয় নি এলিনা। জানায়ও নি কাউকে, বাবা-মাকে নাকি টেলিফোনে জানিয়েছে ভালো আছে সে। হেইনের সঙ্গে পরামর্শ করে ওকে দেখার জন্য একদিন একটা পাবে যাই আবীর সহ। বিশ্বাস করা কঠিন যে ও-ই এলিনা! অনেক ছবিও দেখিয়েছে ওর হেইনে। ব্লিচ ও ডাই করে চুল ব্লন্ড করে ও ছোটো করে ছেঁটে আল্ট্রামডার্ণ স্টাইল নিয়েছে, সুন্দর একটা স্লীভলেস টপস, শর্ট গাউন, হাই হীল জুতো, সব কিছুতে চোখ-ধাঁধানো উজ্জ্বলতা। চোখে নকল মনি লাগিয়েছে, হালকা নীল রঙের। আগ্নেয়গিরির জ্বলন্ত লাভার মতো জ্বলজ্বলে লিপস্টিক! কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই যে ইউরোপীয় নয় সে। খুব ভালোভাবে চেনে যারা ওরাও ধরতে পারবে না। আগের মতো নাদুসনুদুস নেই, স্লিম, ফেটে পড়া গ্ল্যামার। নবজন্ম হয়েছে যেন এলিনার। সত্যি অর্থেই নবজন্ম হয়তো। যাক, মনে মনে খুশি হই, সুখে থাক ওরা, সুখে থাক ধরা। বুকের ভেতর জমাট বেধে থাকা নিঃশ্বাসগুলো পাম্প করে বের দেই। হালকা হয়ে উঠি, আবীরকে বলি, আউয়ালকে ডেকে আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে দূরে কোথাও। চ্যানেল পেরিয়ে ‘আইল অব ম্যান’এ নিয়ে ফেলে আমাকে। ক’দিনের জন্য সমুদ্রের নীলে ডুবে থেকে নিজেও হয়ে যাই পুরোপুরি নীল, ও নিল।
প্রায়ই দেখা করতে আসে হেইনে। দিনের পর দিন, ধারাবাহিকভাবে এতো বেশি খুশি খুব বেশিদিন দেখি নি ওকে। আমারও ভালো লাগে খুব, দু জনেই আমার প্রাণের খুব কাছের, ওদের ভালোলাগায় আপ্লুত হই। আর কোনো খাদে না পড়ার জন্য সাবধান থাকি, যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে মনে হয়। একদিন জিজ্ঞেস করে হেইনে –
তোমার কোনো খেদ নেই তো ডাউ?
মোটেও না। তুমি যদি ওকে নিয়ে খুশি হও, আর এলিনাও সুখী হয়, আমার জন্য এর চেয়ে বেশি আর কি চাওয়ার থাকতে পারে, বলো।
একটা স্বপ্ন অথবা দুঃস্বপ্নের মতো ভুলে থাকি দিনগুলো, পড়াশোনায় মন দেই। বিজ্ঞানের জগত দূরে রাখি কিছুদিনের জন্য, লরেন্স স্টার্নের ‘দ্য লাইফ এন্ড অপিনিয়ন অব ট্রিস্ট্রাম স্যান্ডি, জেন্টলম্যান’ বইটা পড়ে অভিভূত হই, সময় পেলে এ বইটা অনুবাদ করবো, অথবা বন্ধু জ্যাককে বলবো এটা অনুবাদ করতে।
দু মাস না যেতেই উদভ্রান্তের মতো এসে হাজির হেইনে!
এলিনাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না ডাউ, এখন কি করি?
মাথায় যেনো বাজ! এতো দিন আমি কি করি তা নিয়ে গেছি হেইনের কাছে, এখন উল্টো। সে আমার কাছে! বলি –
শান্ত হও, কি হয়েছে বলো, আস্ত একটা মানুষ ও, শূন্যে মিলিয়ে যাবে না।
আসলেই কি মানুষ ও?
ভালো একটা প্রশ্ন করেছো হেইনে। মনে হয় এলিয়েন, এলিনা নয়।
একটা উল্কা, বাতাসের যে স্তরেই যায়, নিজে জ্বলে, ঐ স্তরটাকেও জ্বালিয়ে দেয়।
তোমার কথাই হয়তো ঠিক।
না, তাও না, উল্কা হলে তো জ্বলে নিঃশেষ হয়ে যেতো।
যাহোক, কবে থেকে উধাও হয়েছে?
পরশু।
আগে বলো নি কেন?
সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজেছি।
আমার এখানে খুঁজো নি কেন?
মন বলে নি।
এবার তাহলে ভুল বলেছে তোমার মন।
চমকে ওঠে।
সত্যি?
না হেইনে, ঠাট্টা।
ওহ্, সত্যি হলেই ভালো হতো, দুঃশ্চিন্তায় অভ্যস্ত নই, একটু বিপাকে পড়ে গেছি।
ভেবো না, সব সমস্যারই সমাধান আছে।
ওর কথাটাই ফিরিয়ে দেই, একটু চমকায়।
ওর বাবাকে ফোন করবো কিনা ভাবছি। হেইনে বলে, আর ক’টা দিন সময় নাও। ওকে উদ্ধারের দিনের ঘটানাটা বলে। প্রায় মাসখানেক ফলো করে একটা সপিং সেন্টারে পেয়ে যায় একদিন। দেখা করে বলে, তোমার জন্য একটা সুসংবাদ আছে এলিনা, একটু আড়ালে আসো। চট করে একটা পাবে ঢুকে যাই, যা ওর সঙ্গী কল্পনাও করে নি। এলিনাও বুঝতে পেরেছে যে কালোদের জালে জড়িয়ে পড়েছে সে। হেইনের প্রস্তাব পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ওর সাথে অক্সফোর্ড চলে আসতে রাজি হয়ে যায়। একটা টেক্সি ডেকে ভিক্টোরিয়া কোচ স্টেশনের প্রথম বাসটাতেই উঠে বসে। ওটা ছিল হেরিফোর্ডের। তারপর হেরিফোর্ড থেকে আবার অক্সফোর্ড ফিরে আসে। ওকে বোধ হয় ড্রাগেও এডিক্ট করিয়ে ফেলেছিল। নিজে ডাক্তার হওয়ায় সব কিছু ঠিকঠাক করে ফেলতে পেরেছে হেইনে।
হপ্তাখানেক পাগলের মতো কাটায় হেইনে, যে ভালোবাসা আমি দিতে পারি নি এলিনাকে, তা বোধ হয় দিয়েছে ও। এলিনার তো সুখী হওয়াই উচিত ছিল। তা হয়তো হবার নয়। হেইনের পক্ষে যা যা করার সব করে, যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করি আমিও। বিফলে যায় সব। এক সকালে আমার এখানে এসে হাল ছেড়ে দেয় হেইনে।
আর পারছি না ডাউ।
ঠিক আছে বসো।
ওর বাবাকে ফোন করি। বলে –
দেশে চলে গেছে এলিনা, গতকাল।
দেশে?
হ্যাঁ, দেশে।
আমি যেনো বুঝতে পারি না। জিজ্ঞেস করি –
ভালো আছে তো ও?
হ্যাঁ হ্যাঁ, ভালো। আপনারা দুশ্চিন্তা করবেন না।
হেইনে ও আমার, দু জনেরই শুরু হয়, ‘দুশ্চিন্তাহীন নতুন জীবন!’