শেকড়ের দাগ
মহসীন হাবিব
টিপুকে সাথে নিয়ে মাহবুব চৌধুরী এইমাত্র বাড়ি ফিরে এলেন। ক্লান্ত হয়ে ভেতর দিকের ড্রইং রুমটির একটি সোফায় বসলেন। সবকিছু ভীষণ বিরক্তিকর লাগছে। তার মনে হচ্ছে এখন ঢাকার দিকে দৌড় দিতে। কিন্তু পারছেন না। বরং তাঁর মুখটা হাসি হাসি করে রাখতে হচ্ছে। মুখ ব্যথা হয়ে গেছে। সবার দিকে চেয়ে হাসতে হচ্ছে। জেলে, রিকশাচালক, কুলি, মিস্ত্রী সাবার দিক চেয়ে হাসি মুখে বলতে হচ্ছে, ‘কী খবর, ভাল আছো, তোমার শরীর ভাল?’
আবার পরক্ষণেই নিজেকে সান্ত¦না দিয়ে বলছেন, এই তো আর দু-চারদিন। তারপর আবার স্বাভাবিক জীবন। তিনি ছোটবেলা থেকে তার পিতাকেও তাই দেখেছেন। তাঁর পিতার এমন ভোটের জন্য দ্বারে দ্বারে দৌড়াতে হতো না। ভোট তাঁর পিতার দ্বারে এসে আছড়ে পড়তো। কী আর করা যাবে, ঘাট হচ্ছে অঘাট। সবচে খারাপ লাগে তার হিন্দুগুলোর বাড়ি গিয়ে ভোট চাইতে। হানড্রেড পার্সেন্ট জানা কথা ওরা ভোট দেবে না, তবুও যেতে হবে। রীতি। না হলে খুব বদনাম হয়ে যাবে। মাঝে মাঝে তার কাছে মনে হয় ইলেকশনে দাঁড়ানোর চাইতে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করা ভালো। ভিক্ষুক ইচ্ছা করলে এক বাড়িতে ভিক্ষা না চাইলেও পারে, কিন্তু ইলেকশনে প্রার্থীকে সবার কাছে ভোট চাইতে হয়। মুসলিম লীগের দুর্বল হয়ে যাওয়ার পর থেকেই এসব নষ্টামির শুরু।
হাস্যকর ব্যাপার! বর্তমানে শুধু প্রার্থী না, পরিবারের লোকদেরও গিয়ে ভোট চাইতে হয়। তা না হলে যক্ষের ধন ওই ভোট নিয়ে পাবলিক নোংরামি শুরু করে। তাই স্ত্রী শাহিদাকেও আসতে হয়েছিল। সে দুদিন থেকে জ্বরের কারণে ঢাকায় চলে গেছে। কী করবে বেচারা? মাহবুব সাহেব ম্যাডামের কষ্ট তাঁর নিজের স্ত্রীকে দিয়েই বুঝতে পারেন। ম্যাডাম এসি ছাড়া একদ- থাকতে পারেন না। বাইরে এলে তাঁর আশেপাশে সব সময় টিস্যু রাখতে হয়। তিনি হাতে সব সময় টিস্যু রাখেন।
তবে আশার কথা হলো মাহবুব সাহেবসহ তার কর্মীরা নিশ্চিত যে এবার প্রচুর ভোটের ব্যবধানে তিনি জিতবেন। তিনি ও টিপু বিএনপি তথা চারদলীয় জোটের বেশ কয়েকজন প্রার্থীর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেছেন। তারা সবাই উইন করার ব্যাপারে নিশ্চিত তো বটেই, সরকার গঠনের ব্যাপারে পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে। তাঁর এখানে দৈনিক ইনকিলাবসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকা রাখা হয়। পত্রিকার পরিসংখ্যানেও জোটের জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে।
তিন-চারজন নিজস্ব লোক আছে মাহবুব সাহেবের আশেপাশে রাউন্ড সোফায় বসা। জামায়াতে ইসলামীর দু’জন রোকন ও একজন আমীর এসেছেন মাহবুব সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে। তা ছাড়াও বাড়ির মধ্যে সারাক্ষণ ঘুরঘুর করছে পরেশপুর মসজিদের হুজুর আর বাজার মসজিদের ইমাম। তারা নির্বাচনের ব্যাপারে খুবই আগ্রহী। তাদেরও একই কথা, আওয়ামী লীগ ঠেকাও!
ভোটের ব্যাপারে একটা আলোচনা চলছে। ঘরের ভেতরে আছেন মাহবুব সাহেব, টিপু ও জামায়াতের তিনজন। এরমধ্যে একজন অন্য এলাকার। আর আছে ছাত্তার। ছাত্তার যথেষ্ট খাটাখাটনি করতে পারে। ছেলেটা দলের জন্য যথেষ্ট করছে। ভবিষ্যতে ছেলেটার মূল্যায়ন করার কথা মাহবুব সাহেব মনে মনে চিন্তা করলেন। ছাত্তারের একটা ব্যাপার তার মনে মনে বেশ ভালো লেগেছে। ও তার মনের মতো একজন মানুষ বলে মনে হচ্ছে। মাহবুব সাহেব লক্ষ্য করেছেন ঠিক যে কথাগুলো তিনি বলতে পারেন না তা এই ছাত্তার লোকটা বলে দেয়। রাজনীতি দেখে দেখে অভিজ্ঞতা হয়েছে। প্রথম যেদিন ছাত্তার দলে যোগ দিতে আসল, তখনই মাহবুব সাহেবের মনটা দখল করে নিয়েছে। ছাত্তার পায়ের কাছে বিড়ালের মত বসে থেকে পায়ে হাত দিয়ে রেখে বলেছে, ‘ঘরের ছেলে ঘরে ফিরা আসছি, আমার গুস্তাফি মাফ কইরা দেন।’ মাহবুব সাহেবের অন্যরকম একটি অনুভূতি হয়েছে। ইদানীং পায় হাত দিয়ে এভাবে কেউ মাফ চায় না। কেউ নিজেকে প্রজা ভাবে না, দেশের কুলি মজুরও নিজেকে রাজা মনে করতে চায়। ছোটবেলা সে প্রায়ই দেখত কেউ একজন তাঁর পিতার পা ধরে বসে আছে।’ ছাত্তারের এই কা-তে তার বহুকালের গর্বিত উত্তরাধিকার অনুভূত হয়েছিল।
তিনি ছাত্তারের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘কীরে, হিন্দুগুলোর ভোট দু-চারটা পড়বে আমাদের বাক্সে, কী মনে হয়?’
ছাত্তার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরে বলল, ‘সোজা আঙুলে পরবে না, ভাই, আঙুল বাঁকা করলে যদি দুই চাইরটা পড়ে। আমি চেষ্টা চালাইয়া যাইতেছি, জামায়াতের ভাইয়েরা আছে বিএনপির ভোটাররা তো আছেই।’
টিপু একটু নিচু গলায় বলল, ‘আল্লাহর রহমতে হিন্দুবিরোধী মানুষও আছে অনেক! এখন মানুষগুলার মইধ্যে বুঝ আসতেছে। আর হিন্দুবিরোধী মানুষগুলা আওয়ামী লীগরে ভোট দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
ছাত্তার বলল, ‘এইটা টিপু ভাই হক কতা কইছে। তারা ভারতের ক্রিকেট দলরেও সাপোর্ট দেয় না। পাকিস্তানরে সাপোর্ট দেয়। দুই দ্যাশের খ্যালা হইলে পাকিস্তানরে জিতাইতে পাগল হইয়া যায়।’
মাহবুব মাহেব টিপুর দিকে চেয়ে বললেন, ‘আচ্ছা, হিন্দুদের ভোট তাহলে কত?
‘ভাই, এবার ভোটার লিস্টি অনুসারে নয় হাজার চাইর শ’।’
‘এ তো অনেক ভোটার! এগুলো রয়ে গেছে সব?’
টিপু বলল, ‘সমস্যা আরো আছে ভাই। এগুলা রাজনীতি নিয়া নীরব থাকে। কিন্তুক ভোটের দিন গিয়া সবাইর আগে চুপ কইরা নৌকায় ছাপ মাইরা বাহির হইয়া আসে। আর আমাগো মুসলমানগুলার মাথা মুটা। মিছিল করে, মিটিং করে। তারপর দেখপেন ভুটাভুটির দিন বেলা চাইরটার সুময়ও সেন্টারে নাই।’
জামায়াত রোকন কেফায়েতুল্লাহ বুকে হাত দিয়ে বললেন, ‘ভাইসাহেব, আল্লাহ্র মেহেরবাণীতে আগামী কালের বিশাল জনসভা ও মিছিলে আমাদের দশ হাজার লোক শরীক হবে ইনশাল্লাহ্। আগে আমরা কখনো এত লোক এই অঞ্চলে সমবেত করতে পারি নাই। শয়তান, কাফির বিতারিত করার তৌফিক আল্লাহ্ মেহেরবান এইবার আমাদের দিচ্ছেন।’
দ্বিতীয় রোকনের মাথায় টুপি। ঘাড়ে একটা রিকাব। সে বলল, ‘আমরা যা করার দরকার সেটা করব। আল্লাহর মেহেরবানিতে আমাদের এখন সেই শক্তি আছে জনাব। হজরত ওমর ইবনে ওবায়দুল্লাহর আজাদকৃত গোলাম ও লেখক আবু নজর বলেন, আব্দুল্লা ইবনে আবু আওফা রা: তাঁকে লিখেছিলেন যে, নবী করিম স: বলেছেন, “ জেনে রেখ, তরবারির ছায়ার নীচেই জান্নাত।” এইটা আপনি পাবেন ছহি বুখারি হাদিসের ২৬১০ নম্বরে। ইনশাল্লাহ জনাব, শক্তির ব্যাপারে কোনো চিন্তা করবেন না।’
মাহবুব সাহেব জামায়াত আমীরের সুরেই বললেন, ‘আইজ মুসলিম লীগ নাই, কিন্তু আল্লাহর অশেষ কৃপায় আপনারা ইসলামের পথে আছেন। তা না হলে এদেশ পৌত্তলিকতার ভিড়ে বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে যেতো।’
ভেতর থেকে চা আর বিস্কিট দেওয়া হয়েছে। যতœ করে প্রথমে জামায়াত আমীরের হাতে চা তুলে দেওয়া হল। সে বলল, ‘ভাই আপনাদের একটা কথা বলি। তেলে আর পানিতে কখনো মেশে? এই যে এদেশের হিন্দু গোষ্ঠী, এদের চাল-চলন পোশাক-আশাক সবই তো আমাদের থেকে আলাদা! দ্যাখেন ওদের মেয়ে মানুষগুলো আজও বোরখার মতো একটা রুচিশীল পর্দা গ্রহণ করে না! আমাদের নায়েবে আমির প্রফেসর সাহেব তো স্বপ্ন দেখেন, এদেশের প্রতিটি নারী বোরখার মত ইজ্জতসম্পন্ন পর্দা গ্রহণ করবে, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এদেশের সকল মানুষ শান্তিতে পাশাপাশি বসবাস করবে। যার যার উপর প্রদত্ত দায়িত্ব সে সঠিকভাবে পালন করবে।’
বেশ কিছুক্ষণ হল বাজার মসজিদের ইমাম এসে সবাইকে লম্বা করে ইসলামি সালাম জানিয়ে একপাশে বসেছেন। মুখভর্তি পান। তিনি মুখটা সামনে বাড়িয়ে বললেন, ‘হিন্দুগুলার তো এক্কেবারে পর্দা নাই স্যার! বেহায়া! একদিন পরেশপুরে গেছিলাম শাহজাহান পাটোয়ারি বাড়িতে উঠার মিলাদে। দেখি একটু দূরে হিন্দু রমণী, গায়ে-মাথায় কোনো পর্দা নাই! নাউজুবিল্লাহ! আমাগো কিছু করার ছিল না। দ্যাশটাই তো চালাইছে বেপর্দারা! এইবার যদি আমাগো উপর আল্লাহর নেকনজর হয়।’
জামায়াত আমীর আবার বলল, ‘আলহামদুলিল্লাহ। এখন বড় শান্তি লাগছে ভাইসাব। কাফিররা বুঝতে পারছে না যে তাদের পরাজয় আসন্ন। আমাদের সেন্ট্রালে পরিসংখ্যান হয়ে গেছে। তাতে দেখা গেছে বে-দ্বীন আওয়ামী লীগ বিপুলভাবে পরাজিত হইতে যাইতেছে। আমাদের তো রীতিমতো দিক নির্দেশনা দেওয়া হইতেছে, সোবহানাল্লাহ। এইবার বিএনপি-জামাত জোট জয়ের পর সবকিছু শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে হবে।’
পাশ থেকে এক রোকন বলল, ‘দ্যাখেন, আইজ আফগানিস্তান আমাদের মুসলমান ভাই, অথচ এই কাফিররাই সেই দেশটাকে ধ্বংস করতে চাইতেছে। আমাদের দ্যাশের কাফিররাও দেখবেন তাদের সাথে!’
দ্বিতীয় রোকন বলল, ‘সম্পূর্ণরূপে ইহুদি নাছারাদের কাজ। এইটা কেন করছে জানেন? গত মার্চ মাসে তালিবান সরকার মোবারক নাছারাদের দুইটা বিরাট মন্দির ভাইঙা দিছে। সেইটার শোধ নিতেই ওরা আমেরিকার হামলার জন্য বিন লাদের রহমতুল্লাহির উপর দোষ দিচ্ছে। অথচ কে না জানে যে টুইনটাওয়ারে হামলার পেছনে আছে ইহুদিরা!’
প্রসঙ্গ চলে গেছে দেশ পার হয়ে। টিপু বাইরের ব্যাপারস্যাপারও জানে। সে বলল, ‘দ্যাখেন, আইজ চুপেচুপে কুরআন শরীফ রিসার্চ কইরাই তারা এত কিছু আবিস্কার করল। আর এখন মুসলমানদের উপরেই তা চালাইতে চাইতেছে!’
তিনজন একসাথে মাথা দোলালো। প্রথম রোকন বলল, ‘কত বিজ্ঞানী, কত ইংরেজ মুসলমান হইয়া গেছে। বক্সার মোহাম্মদ আলী কেন মুসলমান হইলেন? কিছু না পাইলে কি এতবড় জ্ঞানী লোক মুসলমান অয়? দ্যাখেন, নিল আর্মস্ট্রং হইলেন একজন জাত খ্রিস্টান। ওরা তো মহাকাশে যাবার সময় সঙ্গে কইরা কোরআন শরীফও নিয়া গেছিল।’
তিনজনই একসঙ্গে বলে উঠল, ‘সোবহানাল্লাহ।’
প্রথম রোকন বলতে থাকল, ‘আর্মস্ট্রং ওইখানে গিয়াই দেখতে পাইল যে চান্দের মাঝখান দিয়া ভাগ! দুনিয়ার বুকে ফিরে আসার তর ছিল না তার। সে মাটিতে পা রাইখাই মুসলমান হইয়া গেছে সোবহানাল্লাহ।’
আমীর মুচকি হেসে বললেন, ‘কিন্তু একটা জিনিস আপনারা লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়ই, এই পৌত্তলিকগুলা কিন্তু সহসা ইসলাম গ্রহণ করে না।’
দ্বিতীয় রোকন বলল, ‘খাঁটি কথা বলছেন। দ্যাখেন, কোটি কোটি হিন্দু! বাংলাদেশেও রইয়া গ্যাছে কত হিন্দু, অথচ শুনবেন না যে একটা হিন্দু মুসলমান হইছে।’
অন্য রোকন বলল, ‘এই জন্য অবশ্য আমাগো ব্যর্থতাও আছে। আইজ আমরা ঠিক মত ইসলাম প্রচার করতে পারতেছি না।’
আমীর বলল, ‘আসলে পবিত্র এই কাজটি, এই মুসলমান বানানোর কাজটি করাইতে হয়। যারা শত শত বছর ধরে ভুল পথে চলছে, তাদের কি সত্যের বাণী শুনালেই তারা পথে আসবে? আসবে না। দ্যাখেন, আমাদের রাসুলে আকরাম সঃ যখন মক্কা বিজয় করেন, তখন কিছু লোক ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করল। আমাদের নবীয়ে করিম সঃ ছিলেন ধৈর্যশীল। তিনি কী করলেন? তিনি তাদের সময় বেঁধে দিলেন দুই দিন। হয় মক্কা থেকে বের হয়ে যাও, অথবা ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আসো। সময় পেল দুই দিন, অথচ ১৮ জন অবিশ্বাসী এর কোনাটাই করল না। তাদের ভেতরে ইবলিস একেবারে গেড়ে বসেছিল। তখন নবীয়ে করিম সঠিক কাজটি করলেন সোবহানাল্লাহ। নবীয়ে করিম নিজে নেতৃত্ব দিয়ে তাদের তরোয়াল দিয়ে বধ করলেন। আপনি ভারতের দিকে চেয়ে দেখেন। তিমুর লঙ যখন ভারত আক্রমণ করলেন তখন এক লাখ এই অবিশ্বাসী পৌত্তলিক হত্যা করেছিলেন। তারপর ইনশাল্লাহিতালা এইখানে অনেক অবিশ্বাসী বিশ্বাসের পথে, ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আসতে বাধ্য হয়েছিল।’
ছাত্তার মন দিয়ে এসব জ্ঞানের কথা, শান্তির কথা, ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ কথা শুনছিল। সে বলল, ‘আইজ আমরা অসহায়। হিন্দুগোই তো হইয়া গ্যাছে দ্যাশটা।’
মাহবুব সাহেব অনেকক্ষণ কথা শুনছিলেন। এবার বললেন, ‘ছাত্তার একটা খাঁটি কথা বলেছে। এই সরকার সব গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছে হিন্দুদের। সচিব, অতিরিক্ত সচিব, হাই কমিশনার পদে অনেক হিন্দুকে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য ম্যাডাম সেগুলো সব জানেন। তার হাতে লিস্ট তুলে দেওয়া হয়েছে। ইনশাল্লাহ এর একটাও থাকবে না। হিন্দুগুলার তো অবশ্যই ফোর্স রিটায়ারমেন্টে যেতে হবে।’
প্রথম রোকন নিজের দাড়িতে হাত বুলিয়ে বলল, ‘আলহামদুলিল্লাহ। শুনতেও একটা তৃপ্তি। মুসলমানের দেশ, পুরোপুরি খাঁটি মুসলমানের হয়ে উঠবে।’
টিপু বলল, ‘তাইলে ভাইজান, ওদের আগে আমাদের ভোটারদের কী করে ভোট সেন্টারগুলায় পাঠানো যায়?’
জামায়াতের প্রথম রোকন বলল, ‘এবার আর ওই চিন্তা করতে হবে না ইনশাল্লাহ্। আমাদের ছেলেরা আগে থেকেই নিজেদের লোকদের ভোট দেওয়ানোর ব্যবস্থা করবে। আল্লাহ-পাক শুধু নির্বাচনটা ঠিকভাবে সম্পন্ন করুন।’
মাহবুব চৌধুরীর ঘুম পাচ্ছে। তিনি মুখে কিছু বললেন না, উঠে দাঁড়ালেন। সবাই বুঝল এবার উঠতে হবে।
জামায়াতের আমীর, দু হাত এক করে আদপের সঙ্গে হ্যা-শেক করল। তারপর মাহবুব সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ইতিহাস ভাইজান লেখা হয় বিজয়ীর পক্ষে। দেশ যদি তখন স্বাধীন না হতো, তাহলে এদেশের স্কুলের পাঠ্যপুস্তকের পাতায় পাতায় থাকতো নায়েবে আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের নাম, থাকতো আমাদের নেতা নিজামি সাহেব, মুজাহিদী সাহেবের নাম। শেখ মুজিবের নাম থাকতো মীর জাফরের সিরিয়ালে। এই ক্ষতিটা আমরা মেনে নিয়েছি। আল্লাহ হাফেজ।’
তারা বের হয়ে যেতেই মাহবুব সাহেব ঘুমঘুম চোখে বাজার মসজিদের ইমামের দিকে তাকালেন।
ইমাম সামনে এসে সুরা পড়ে মাহবুব সাহেবের কপালে একটা ফু দিলেন। তারপর বললেন, ‘বিজয় আমাদের নিশ্চিত। আগেভাগে একটা আবদার রাইখা যাই।’
মাহবুব সাহেব তাকিয়ে আছেন।
‘এলাকায় কয়েকটা বাউল আছে, গাজা-টাজা টানে। অনৈসলামিক চিন্তা ছড়ায়। লালন ফকির যেমুন করতো। এইগুলারে ইলেকশনের পর উৎখাত করতে হবে হুজুর।’
মাহবুব সাহেব বললেন, ‘আপনার বলতে হবে না। এই ডার্টি সো কলড কমিউনিটি আমার চোখের শূল। ইনশাল্লাহ, দোয়া করবেন।’