বাংলাদেশি নভেলস : সাহিত্যের অন্যতম কঠিন ধারা হলো অনুবাদ। যখন একটি সাহিত্যিক রচনা এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ করা হয় তখন সেগুলো একদিকে যেমন সুখপাঠ্য হয়, তেমনি তার মাধ্যমে ভিনদেশি সাহিত্যিক গোষ্ঠীর সাহিত্যস্রোত বা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও একটা ধারণার জন্ম হয়। ইংরেজি সাহিত্যের বহু জনপ্রিয় ক্লাসিকের পাশাপাশি অসংখ্য একাডেমিক বইয়ের অনুবাদ বাংলায় করছেন বাংলাদেশের বিদগ্ধ সাহিত্যিক-একডেমিশিয়ানসহ এ ধারায় উৎসাহী অনুবাদকগণ। এতে করে অন্তঃভাষিক যে মিথস্ক্রিয়া হয়, তাতে পরস্পরের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-অর্থিনীতি-রাজনীতি সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা জন্মে। যেহেতু এটি একটি কঠিন ধারা, সেকারণে, এ ধারায় খুব অপ্রতুল কাজ আমাদের চোখে পড়ে।
মনোজগতের বিউপনিবেশায়ন
২০২৪-এর অমর একুশে বইমেলাতেও কয়েকটি অনূদিত বই এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে “Decolonising the Mind : The Politics of Language in African Literature” এর বাংলা অনুবাদ, “মনোজগতের বিউপনিবেশায়ন : আফ্রিকার সাহিত্যে ভাষার রাজনীতি”; বইটির মূল লেখক নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো, যাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা ব্রিটিশ উপনিবেশিত রাষ্ট্রব্যবস্থায় একটি প্রথাগত কৃষক পরিবারে। ভাষার বিউপনিবেশায়ন -তৎপরতার অংশ হিসেবে ইংরেজির বদলে তিনি মাতৃভাষা গিকুয়ুতে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। পাশাপাশি সক্রিয় করছেন কেনিয়ার শিক্ষাক্রমের বিউপনিবেশায়ন-প্রচেষ্টায়। পরিণামে তাঁকে কারাবরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অন্যায় অবদমনের শিকার হতে হয়েছে। উগান্ডার মাকারেরে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব লিড্স্ থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করা থিয়োঙ্গো বর্তমানে ইংরেজি ও তুলনামূলক সাহিত্যের ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক হিসেবে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, আরভিনে কর্মরত।
বইটিকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন শিবলী নোমান, যাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। মনোজগতের বিউপনিবেশায়ন তাঁর প্রথম প্রকাশিত অনুবাদগ্রন্থ। গ্রন্থটিকে ভাষা ও ভাষার রাজনীতি বিষয়ে অন্যতম প্রভাবশালী কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। আফ্রিকার সাহিত্য ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে ঔপনিবেশিক শাসকরা যে প্রক্রিয়ায় সমগ্র মহাদেশটি থেকে হটিয়ে দিয়েছিল, নগুগি ওয়া থিয়াঙ্গো সে প্রক্রিয়ারই ধারাবাহিকতা দেখেছেন উপনিবেশ-পরবর্তী কেনিয়াতে। দেশটিকে ভাষা, সাহিত্য ও রাজনীতির বিউপনিবেশিকায়ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তার প্রতিক্রিয়ায় শাসকরা যে-সব নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল, সেগুলোর বর্ণনা গ্রন্থভুক্ত প্রবন্ধগুলোতে মিলবে। এ প্রন্ধগুলো সাহিত্যতত্ত্বের গবেষকদের কাছে যেমন আকর্ষণীয়, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছেও তেমনই প্রাসঙ্গিক। বইটি প্রকাশ করেছে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড।
বিয়ন্ড রিলিজিয়ন : বিশ্বায়নের যুগে নৈতিকতা
চতুর্দশ দালাই লামা বৌদ্ধ ধর্মগুরু, শিক্ষক, লেখক, তিব্বতের জনগণের আধ্যাতিক ও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তাঁর লেখা “বিয়ন্ড রিলিজিয়ন” বইটির বাংলায় অনুবাদ বের হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ১৯৩৫ সালের ৬ জুলাই তিব্বতের তাকসের গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তেনজিন গিয়াৎসো, মূলত তিনিই দালাই লামা। মাত্র ২ বছর বয়সে তিনি তিব্বতের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে অভিষিক্ত হন। ১৯৫৯ সালে চীনা আক্রমণের পর তিনি ভারতে পালিয়ে যান এবং ধর্মশালায় বসতি স্থাপন করেন। ১৯৮৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
“বিয়ন্ড রিলিজিয়ন : বিশ্বায়নের যুগে নৈতিকতা” শিরোনামে বইটির বাংলায় অনুবাদ করেছেন আনিকা তাবাসসুম। এ অনুবাদকের জন্ম গাজীপুর জেলায়, বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী তিনি। বইটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা আদর্শ।
দি গুড আর্থ
পার্ল এস. বাক একজন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখিকা । তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার হিলসবরো-তে একটি মিশনারি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শৈশবে বাবা-মায়ের সঙ্গে চীন দেশে চলে যান এবং বেশিরভাগ সে দেশেই কাটান। অসংখ্য গ্রন্থের লেখিকা বাক-এর বিখ্যাত অধিকাংশ উপন্যাস চীন দেশে ও সমাজের প্রেক্ষাপটে লেখা। তাঁর “দি গুড আর্থ” উপন্যাসটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন এমদাদুল ইসলাম। শখের বসেই তিনি মূলত অনুবাদের কাজ করেন। তাঁর জন্ম ১৯৫৫ সালের ৯ অক্টোবর বিক্রমপুরে (মুন্সিগঞ্জ)। বইটি প্রকাশ করেছে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ।
সৌজন্যে : www.suryalaw.ca