বরুণ কুমার বিশ্বাস: গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার অমর একুশে বইমেলার ষোড়শ দিনে বাংলাদেশি নভেলস-এর উদ্যোক্তা লেখক ও গবেষক সুব্রত কুমার দাসকে নিয়ে রচিত দুটি বইয়ের পাঠ উন্মোচন হয়েছে।
প্রকাশনা সংস্থা মূর্ধন্য-এর আয়োজনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কবি সাহিত্যিক এই অনাড়ম্বর আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, আসছে ৪ মার্চ মাস কীর্তিমান এ প্রাবন্ধিক, সংগঠক ও জনপ্রিয় শিক্ষকের ষাটতম জন্মদিন ।
‘হীরকজয়ন্তী : সুব্রত কুমার দাস’ ও ‘ Subrata Kumar Das : A wonder Boy of Intellect’ শিরোনামে বই দুটির পাঠ-উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু, প্রাবন্ধিক ও অধ্যাপক এম এ আজিজ মিয়া, কবি, গবেষক ও অনুবাদক ড. গৌরাঙ্গ মোহান্ত, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপাচার্য ড. সঞ্জয় অধিকারী, কবি, গবেষক ও বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাফিস আহমদ, কবি চঞ্চল শাহরিয়ার, কবি ও লেখক মৌসুম মনজুর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফজলুল হক সৈকত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ইসমাইল হোসেন, প্রকাশক সঞ্জয় মজুমদার, প্রাক্তন অধ্যক্ষ মো. ইসহাক শিকদার, চার্টার্ড একাউন্টেন্ট জাহিদুল ইসলাম শাহ, কবি, কথাসাহিত্যিক ও আলোকচিত্রী বরুণ কুমার বিশ্বাস, শিক্ষক আয়শা আখতার, ব্যাংকার রোকসানা ইয়াসমিন ঊর্মি, শিক্ষক কাজী রাজিয়া সুলতানা প্রমুখ।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গনের এই পাঠ-উন্মোচন অনুষ্ঠানে আগত অতিথিবৃন্দ উচ্ছ্বাস ও আনন্দের সাথে তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। দুটি গ্রন্থেরই সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন ইয়েটস গবেষক সুজিত কুসুম পাল। ‘হীরকজয়ন্তী : সুব্রত কুমার দাস’ গ্রন্থে আরও ছিলেন সঞ্জয় মজুমদার।
দেশবরেণ্য সাংবাদিক ও সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু বলেন, “সুব্রতর সাথে আমার কেবল ব্যক্তিগত সম্পর্ক নয়, তাঁর সাথে আমার পারিবারিক সম্পর্ক।“ তিনি উল্লেখ করেন সুব্রতর সাথে তার পরিচয় তার বড় ভাই, দর্শনের অধ্যাপক প্রয়াত মোজাফ্ফর হোসেনের মাধ্যমে। তিনি আরও বলেন, সুব্রতর পড়াশোনা, পরিশ্রম, উদ্যম, এবং সাহিত্যের জন্যে নিবেদন – এগুলোতে তিনি মুগ্ধ। “তিনি আমাদের পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছেন এই কারণে যে, আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পর তার অপ্রকাশিত অর্থাৎ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লেখাগুলোকে মলাটবন্দি করেছিলেন সুব্রত” বলে মঞ্জু উল্লেখ করেন। ‘অগ্রন্থিত মোজাফ্ফর হোসেন’ শিরোনামে সেই গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়ে আমাদের পরিবারের কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছেন সুব্রত। মঞ্জু আরও উল্লেখ করেন,সুব্রত কানাডায় প্রবাসী হয়েও সেদেশে বাংলা সাহিত্যকে ছড়িয়ে দিতে এবং কানাডার সাহিত্যকে বাঙালিদের সাথে পরিচিত করাতে উদ্যোগী হয়ে তা সার্থক করে তুলেছেন। তিনি সুব্রতর প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, অত্যন্ত সমৃদ্ধ দুটি গ্রন্থ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সুব্রত কুমার দাস অত্যন্ত প্রতিভাবান – তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তিনি প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে চলেছেন। অধ্যবসায়, পরিশ্রম ও মেধা তাকে আরো উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
ড. গৌরাঙ্গ মোহান্ত বলেন, সুব্রত কুমার দাসের ষাট বছর পূর্তি উপলক্ষে দুটি বই হয়েছে যা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। সুব্রতকে তিনি একজন কৃতী ও প্রতিভাধর লেখক হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, সুব্রত একাধারে দুটো ভাষায় চর্চা করছেন – বাংলা এবং ইংরেজিতে। বাংলা সাহিত্যকে ছড়িয়ে দেবার জন্যে তিনি ইংরেজিতে লিখছেন। আবার তিনি ইংরেজি থেকে বাংলায় লিখছেন আমাদেরকে আরো সমৃদ্ধতর করবার জন্যে। তার এই সাধনা জাগ্রত থাকুক এই অভীপ্সা ব্যক্ত করেন গৌরাঙ্গ।
অধ্যাপক এম এ আজিজ মিয়া বলেন, “আমি অভিভূত কেননা আমি এই আয়োজনটির কথা গতকাল রাত দশটার আগে জানতেও পারিনি। বই প্রকাশ হয়েছে শুনেছি, কিন্তু তার প্রকাশনা অনুষ্ঠান এভাবে হবে, তা জানতাম না। বিষয়টি আমাকে দারুণভাবে উজ্জীবিত করেছে। আমি এক সময় কামারখালী ছিলাম, সুব্রতও সেখানে ছিল। তখন থেকে পরিচয়। সেই হিসেবে, আমার সাথে সুব্রত’র প্রাচীনতম সম্পর্ক।” মেলাতে সুব্রতর অনুপস্থিতিতে এই পাঠ-উন্মোচন আয়োজনে তিনি ভীষণ আনন্দ প্রকাশ করেন।
ড. সঞ্জয় অধিকারী বলেন, সুব্রত একজন নিবেদিত প্রাণ গবেষক ও সাহিত্যিক। তিনি মানুষের জন্য অনেক কিছু করেছেন। বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে দেবার জন্যে প্রথম প্রচেষ্টা বাংলাদেশি নভেলস নামের ওয়েবসাইট-এর মাধ্যমে। সঞ্জয় বলেন, সুব্রত আমাদের সকলের নমস্য। তিনি সুব্রতর জন্য তার শ্রদ্ধার কথা উল্লেখ করেন। তিনি আরও প্রত্যাশা করেন সুব্রত ভবিষ্যতে আরো অবদান রাখবেন। তিনি তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
ড. নাফিস আহমদ বলেন, সবাই বলেন ষাটে সংক্রান্তি হয়। কিন্তু ইউরোপ আমেরিকায় বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। তিনি বলেন, “স্যার যেভাবে ষাটে এসে, আমাদের আলোড়িত করছেন তা ভীষণ বিস্ময়ের বিষয়। প্রত্যাশা করি তিনি কানাডা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাহিত্যে নিয়ে আরো লেখা উপহার দেবেন।“
কবি চঞ্চল শাহরিয়ার সুব্রত কুমার দাসকে নিজের ভীষণ কাছের মানুষ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি জানান ত্রিশ বছরের ও অধিক সময় ধরে সুব্রতর সাথে তার সম্পর্ক। বাংলাদেশের সমালোচনা সাহিত্য ও প্রবন্ধ সাহিত্যে যারা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন, তাদের মধ্যে সুব্রত একজন বলে উল্লেখ করেন চঞ্চল। তিনি বলেন, “এমন গুণী মানুষের আরও বেশি মূল্যায়ন হোক।“
জাহিদুল ইসলাম শাহ বলেন, তিনি সুব্রত কুমার দাসকে ১৯৯৪ সাল থেকে জানেন। তিনি উল্লেখ করেন, যতদিন সুব্রত বাংলাদেশে ছিলেন তাঁর কাজের সাথে তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন। জাহিদ বলেন, “তিনি অত্যন্ত পরিশ্রমী একজন মানুষ। তিনি মানুষের প্রতি যে কী পরিমাণ সংবেদনশীল তা তাঁর সাথে না মিশলে আমি জানতাম না। যেকোনো কাজ-ই তিনি অত্যন্ত মনোযোগ ও ভালোবাসার সাথেই করেন।“
বই দুটির প্রকাশক সঞ্জয় মজুমদার উল্লেখ করেন একযুগেরও বেশি সময় ধরে সুব্রত কুমার দাসের সাথে তার কাজের অভিজ্ঞতার কথা।
তিনি সুব্রতর পঞ্চাশতম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে প্রকাশিত সম্মাননা গ্রন্থটি মূর্ধন্য থেকে প্রকাশিত হবার কথা উল্লেখ করেন। “আমার সৌভাগ্য যে, ষাটতমতে দুটো বইও মূর্ধন্য থেকে প্রকাশিত হয়েছে” – বলেন সঞ্জয়।
সৌজন্যে : www.suryalaw.ca