বরুণ কুমার বিশ্বাস: প্রতি বছরের এবারও একুশে বইমেলায় কানাডায় থাকা বাঙালি লেখকদের বিপুল সংখ্যক নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। এইসব লেখকদের মধ্যে যেমন রয়েছেন জ্যেষ্ঠ লেখকেরা, তেমনি তরুণ লেখকও কম নেই। আছে গল্প, কবিতা, উপন্যাস। অনুবাদও বাদ যায়নি এবার। গদ্যগ্রন্থের মধ্যে যেমন রয়েছে আত্মজৈবনিক রচনা, তেমনি কানাডীয় জীবনের সমস্যা নিয়েও কেউ কেউ লিখেছেন। বই প্রকাশ উপলক্ষে ঢাকায় ছুটে গেছেন বেশ কয়েকজন।
বাংলাদেশি নভেলস-এর উদ্যোক্তা সুব্রত কুমার দাস এ প্রসঙ্গে বলেন, “কানাডায় লক্ষাধিক বাংলাদেশির বাস। তাঁদের মধ্যে শতাধিক বাঙালি রয়েছেন যারা পাবলিসড রাইটার।“ তিনি আরও বলেন, “এই যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লেখক কানাডায় রয়েছেন এটি রীতিমতো উৎসাহব্যঞ্জক একটি ব্যাপার”। বই নিয়ে এই উচ্ছ্বাসকে রীতিমতো প্রশংসার চোখে দেখেন ঊনত্রিশটি গ্রন্থের লেখক সুব্রত কুমার দাস। প্রবাসে থেকেও বাংলা বই নিয়ে লেখকদের এমন উৎকণ্ঠা, উদ্দীপনা এবং উৎসাহ নিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, “এই লেখকেরা তো বই নিয়েই উজ্জীবিত। খারাপ কোনো জিনিস নিয়ে তো নয়। সুতরাং তাঁরা প্রশংসার দাবীদার।“ কানাডার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা বাঙালি লেখকদের এই মননই বিদেশের মাটিতে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখবে বলে মন্তব্য করেন সুব্রত।
এবছর বইমেলায় স্মৃতিকথামূলক গদ্যগ্রন্থের মধ্যে ‘আমার স্মৃতিতে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো’ এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন। মুক্তিযুদ্ধকালে ট্রেনিং নিয়েছিলেন ড. ঊষা রাণী দাস। দেশ স্বাধীন হয়ে যাবার কারণে কলেজছাত্রী ঊষার সৌভাগ্য হয়নি যুদ্ধে অংশ নেবার। স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছর পরে এসে ঊষা লিপিবদ্ধ করেছেন অগ্নিঝরা দিনগুলোর স্মৃতি। বইটি প্রকাশ করেছে সপ্তর্ষি প্রকাশনী (স্টল নম্বর ৬৮)। এছাড়াও কানাডায় থাকা পুরস্কারপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ গবেষক তাজুল মোহাম্মদের বই ‘বীর যোদ্ধাদের বীরত্বগাথা’ প্রকাশ করেছে বিদ্যা প্রকাশ (স্টল নম্বর ৩২৬-৩২৯)। স্মৃতিকথামূলক গদ্যগ্রন্থের মধ্যে কানাডীয় বাঙালি ড. ঝর্ণা চ্যাটার্জীর ‘একটি বাঙালি মেয়ের কানাডার জীবন-কাহিনী’ বিশেষ উল্লেখের দাবীদার। কলকাতা থেকে ছয় দশক আগে কানাডায় আসা ঝর্ণার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা অসামান্য এক ভাষায় ফুটে উঠেছে। মূর্ধন্য প্রকাশিত (স্টল নম্বর ৬৩৩-৬৩৪) এই বইটির ভূমিকা লিখেছেন সুব্রত কুমার দাস।
কানাডার অগ্রগামী বাঙালি সুধীর সাহা বিপুল সংখ্যক বইয়ের লেখক। প্রতি বছর নতুন নতুন বই প্রকাশ করে চলেছেন তিনি। বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখক সুধীর সাহার প্রবন্ধগ্রন্থ ‘হে সভ্যতা প্রকাশ করেছে অমিয় ধারা (স্টল ১২)। ২২টি প্রবন্ধের এই সংকলনে লেখক যুদ্ধবিরোধী তাঁর চেতনাকে শাণিত করেছেন।
আগামী প্রকাশ করেছে টরন্টোর বহুল পরিচিত সংস্কৃতিকর্মী তাসমিনা খানের বই ‘আপনি কি মানসিকভাবে সুস্থ?’ গতবছর তাসমিনার লেখা প্রথম বইটি প্রকাশ করেছিল মূর্ধন্য (স্টল নম্বর ৬৩৩-৬৩৪)। ‘অটিসম কোনো অভিশাপ নয়’ শিরোনামের সেই গ্রন্থের জন্য নন্দিত হয়েছেন তাসমিনা।
কানাডার হ্যালিফ্যাক্স শহরের বাসিন্দা অতনু দাশ গুপ্তর বই ‘কানাডার পথ ও রথের বৃত্তান্ত’প্রকাশ করেছে সাফল্য (লিটল ম্যাগ চত্বর স্টল নং ৯০)। অসম্ভব উদ্দীপনাময় মানুষ অতনুর প্রথম বই প্রকাশিত হয়েছিল গতবছর। সেটি ছিল গল্পগ্রন্থ। আত্মজীবন নিয়ে আরও যে বই প্রকাশিত হয়েছে এবার তার মধ্যে রয়েছে ড. ইসমেত আরা মুন রচিত ‘আমার যত কথা’। প্রকাশক রাদ্ধ প্রকাশ (স্টল ৮৩৬)। এছাড়াও অনন্যা (স্টল ৩২) প্রকাশ করেছে জসিম মল্লিকের বই ‘হৃদয়ে লিখেছি নাম’। র্যামন পাবলিশার্স প্রকাশ করেছে টরন্টোর অগ্রগণ্য নাট্যকর্মী আহমেদ হোসেনের বই ‘ইচ্ছের ডানায়’।
মোস্তফা আকন্দ টরন্টোর অগ্রগণ্য সমাজকর্মী। লেখক হিসেবেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। নেসার আহমেদ একজন লেখক ও নিবন্ধিত সমাজকর্মী। মেন্টাল হেলথ নিয়ে কাজ করছেন দীর্ঘদিন। ঢাকার একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তাদের যৌথ প্রয়াস ‘ফারাক’। কানাডার বাঙালি সমাজের সম্পর্কের জটিলতাকে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন লেখকদ্বয়। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, মোস্তফা আকন্দ রচিত অন্য যে বইগুলো ইতোমধ্যে পাঠকের হাতে পৌঁছেছে সেগুলো হলো ‘কেমন দেশ ক্যানাডা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’ এবং ‘দূর আকাশের টান’।
কানাডা অভিবাসনের জন্য স্বপ্নের এক দেশ। বাংলাদেশ থেকে অভিবাসন নিয়ে কানাডায় আসতে আগ্রহী মানুষদের সংখ্যা কম নয়। এডমন্টনের লেখক এম এল গণির বই ‘কানাডা অভিবাসনের আবেদন: প্রত্যাশা ও বাস্তবতা’ পাওয়া যাচ্ছে ৪৪৮ স্টলে। মাহমুদা নাসরিনের বই ‘কানাডা-বাংলাদেশ: ডায়াস্পোরা জীবন’ প্রকাশ করেছে অনশ্বর প্রকাশনী (স্টল ২৫। লিটল ম্যাগ চত্বর)।
টরন্টোর ইয়েটস গবেষক সুজিত কুসুম পালের ‘ইয়েটসের কবিতায় নারী ও নিকুঞ্জ’ গ্রন্থের তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। মূর্ধন্য (স্টল ৬৩৩-৬৩৪) পরিবেশিত এই বইটির প্রকাশক বেঙ্গলি লিটারারি রিসোর্স সেন্টার।
সৌজন্যে : www.suryalaw.ca