বরুণ কুমার বিশ্বাস
নন্দিত ঔপন্যাসিক সালমা বাণী বরাবরই জীবনের কথা বলেন। তাঁর অসামান্য গল্প বলার ধরনে কখনও উঠে এসেছে অভিবাসী নির্যাতিত নারীর কথা, কখনও উঠে এসেছে বস্তিজীবনের আখ্যান। বাংলাদেশি অভিবাসীদের প্রামাণ্য দলিল হয়ে উঠেছে তাঁর উপন্যাস। এ ঔপন্যাসিকের জন্ম ঢাকার সেন্ট্রাল রোডে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর। অধীত বিদ্যার মধ্যে রয়েছে আইনও। ইউনিভার্সিটি অব টরোন্টোতে পড়াশোনা করেছেন ‘ক্রিয়েটিভ রাইটিংস’ বিষয়ে।
অনন্য এ কথাসাহিত্যিক এ বছর পেয়েছেন ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’, এছাড়াও ‘ইমিগ্রেশন’ উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন ‘জেমকন সাহিত্য পুরস্কার’, সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য পেয়েছেন ‘বাংলা একাডেমি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পুরস্কার’।
তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘জলের ওপর টিপসই’, ‘নিন্দিত উত্তরণ’, ‘ভাঙ্গারি’, ‘গোলাপী মঞ্জিল’, ‘পরিসরের মাপজোখ’, ‘ইমিগ্রেশন’, ‘যুবক হয়ে ওঠার সময়’।
জলের ওপর টিপসই মূলত আশির দশকের সেন্ট্রাল রোড ও হাতিরপুল এলাকার জনজীবন নিয়ে লেখা। ব্যাঙা তার মায়ের জমিটুকুও লিখে নিতে চায়। কিন্তু মা রাজি হয় না। একজন সামান্য গৃহকর্মী মা তার জমিটুকুকে আগলে রাখতে খুব চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যাঙা যেকোনো প্রকারে তা লিখে নিতে উদগ্রীব হয়ে ওঠে। লিখে দিতে রাজি না হওয়ায় এক পর্যায়ে ব্যাঙা তার মায়ের আঙ্গুল কেটে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পকেটে ধারালো ছুরি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ছেলের হাত থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতেই সে নিজেকে বোরকায় আড়াল করে ফেলে। মূলত সমাজের ধনী ও দরিদ্রের যে বৈষম্য এই সমাজে বিদ্যমান, তা মা ও ছেলের আখ্যানের ভেতর দিয়েই বিবৃত হয়েছে। আর স্বামী পরিত্যক্ত একজন নারীর তিলে তিলে সঞ্চিত অর্থে কেনা জমিটুকু রক্ষা করতেই যতো চেষ্টা। জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় আসা গৃহকর্মীদের বেঁচে থাকার লড়াই নিয়েই এ উপন্যাস— ‘জলের ওপর টিপসই’।
সৌজন্যে : www.suryalaw.ca