‘Bildungsroman’ ধারাটি ইংরেজি সাহিত্যে স্যামুয়েল বাটলারের (১৮৩৫-১৯০২) আত্মজৈবনিক উপন্যাস The Way of All Flesh দিয়ে ১৯০২ সালে শুরু হয়েছিল। যদিও উপন্যাস, কিন্তু যেহেতু আত্মজৈবনিক, তাই লেখক ব্যক্তিগত সমালোচনা এড়াতে পারেননি কিছুতেই। এ-ধারার পরবর্তী সফল সংযোজন জেমস্ জয়েসের (১৮৮২-১৯৪১) A Portrait of the Artist as a Young Man (১৯১৬) কম সমালোচিত হলেও ডি এইচ লরেন্সের (১৮৮৫-১৯৩০) Sons and Lovers (১৯১৩) তীব্র আক্রমণের মুখে পড়ে। শৈশব-কৈশোরের বেড়ে-ওঠার যে-ঘটনাপ্রবাহ ‘Bildungsroman’-এ তারই ঔপন্যাসিক চিত্রায়ণ। বাংলা ভাষায় সে-ধারার প্রধান পুরুষ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৫০)। ‘পথের পাঁচালী’ (১৯২৯) এবং ‘অপরাজিতা’ (১৯৩১) বাঙালিজীবনের অসাধারণ আলেখ্য হলেও অন্তত একটি বিষয় উপন্যাস দুটিতে অনুপস্থিত, তা হলো প্রধান চরিত্রের যৌন-চেতনার বিকাশ। সে-বিকাশের শিল্পিত প্রকাশ দীর্ঘ পরে হুমায়ুন আজাদের (১৯৪৮-২০০৪) উপন্যাস ‘সব কিছু ভেঙে পড়ে’তে ১৯৯৫ সালে আমরা পেয়েছি। পুরুষের হয়ে-ওঠার ঘটনার বর্ণনা সেখানে পাওয়া গেলেও, একই রকমভাবে তেমনটি লব্ধ হয়নি নারীর ক্ষেত্রে। ফরিদপুরের বিস্মৃতি কথাসাহিত্যিক সুলেখা স্যালাল (১৯২৮-১৯৬২) সম্ভবত নারীর ‘Bildungsroman’ রচনায় বাংলা ভাষায় অগ্রলেখক। বাংলাদেশের গ্রামীণ কৃষিজীবী সমাজের প্রেক্ষাপটে তাঁর ‘নবাঙ্কুর’ (১৯৫৫) উপন্যাসটির প্রধান মানুষ ছবির বেড়ে-ওঠাই চিত্রিত হয়েছে প্রীতিকর এক কাহিনীর ভেতর দিয়ে। ছবির ব্যক্তিক-পারিবারিক এবং সামাজিক সংঘাতের সঙ্গে তার প্রেমেরও পরিচয় পাওয়া যায় এতে; যদিও যায় না জীবনের রহস্যময় সেই অধ্যায়টির, যার লিখিত প্রকাশ ঘটেছে দীর্ঘদিন পরে আকিমুন রহমানের (জন্ম ১৯৫৯) ‘পুরুষের পৃথিবীতে এক মেয়ে’তে। ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত সে-উপন্যাসটি নারীর বেড়ে-ওঠার সত্যিকার এক চিত্রায়ণ। কাহিনীগত দুর্বলতা নিয়ে বাংলা ভাষায় একই ধারার পরবর্তী সংযোজন তসলিমা নাসরিনের (জন্ম ১৯৬২) ‘আমার মেয়েবেলা’ (১৯৯৯) এবং ‘উতল হাওয়া’ (২০০২)। সমকালেই প্রকাশিত হয় আকিমুন রহমানের দ্বিতীয় উপন্যাস ‘রক্তপুঁজে গেঁথে যাওয়া মাছি’ (১৯৯৯)। এ-উপন্যাসেও আকিমুনের প্রধান অনুসন্ধান শিশু ও কিশোরকালের এক বালিকার না বলা সব কথা। ‘জীবনের রৌদ্রে উড়েছিলো কয়েকটি ধূলিকণা’য় বর্ণিত সময়টি তুলনায় অগ্রবর্তী; যৌবনে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে অবহেলিত এক নারী।
‘পুরুষের পৃথিবীতে এক মেয়ে’র এনজিওকর্মী শামীমা বা ‘রক্তপুঁজে গেঁথে যাওয়া মাছি’র পারভীন আক্তার যৌবনে দাঁড়িয়ে দেখেছে তাদের শৈশবকে। শামীমার দর্শন একটি নারীশিশু জন্ম থেকে শুরু করে চূড়ান্ত অবহেলার যে-চিত্র উপস্থাপন করে, পারভীন আক্তারের দর্শনে
তার আবেদন ততখানি গ্রাহ্য বলে মনে হয় না। শামীমার কাহিনী শুরুই হয়েছে ‘আমি আমার পিরিয়ডের জন্য অপেক্ষা করছিলাম’ দিয়ে, যা বাংলা ভাষার সাহিত্যে দুঃসাহসিক এক উন্মোচন। শামীমা প্রকৃতপক্ষে তার প্রেমিক দ্বারা গর্ভবতী হয়ে পড়েছে, যদিও প্রেমিক তার গর্ভস্থ সন্তানের দায়িত্ব স্বীকারে গররাজি। প্রেমিকের নিকট অবিশ্বস্ত প্রমাণিত শামীমা বারবার পেছন ফেরে, ফিরে ফিরে দেখে তার জন্মকালীন অবহেলা, জন্মদাতার অবহেলা, সমাজের অবহেলা। দুঃসহ সে-অবহেলার করালগ্রাসে দগ্ধ-পরিশ্রান্ত-হতাশ শামীমার জীবনকথা পাঠককে উপহার দিয়েছে একটি নতুন বোধের। যে-কোনো পুরুষ পাঠকের কাছে শামীমার প্রতি সমাজের এই অবহেলার চিত্রটি যেমন করুণাসৃষ্টিকারী, তেমনি শামীমার শারীরবৃত্তীয় ব্যাপারগুলোর বাহ্যিক প্রকাশ যেন এক দিগন্তের উন্মোচন। একজন নারীপাঠকের কাছে তা যেন নিজেকে নতুন করে আবার দেখা। পারভীন কিন্তু পাঠকের ওই স্নেহার্দ্র সৃষ্টি লাভ করেনি, অন্তত উপাখ্যানের প্রথম দিকে তো নয়ই। প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারনি পারভীনের জীবনে বিয়ের মতো কোনো ঘটনা না ঘটলেও পুরুষমানুষ না পাওয়ার ‘তড়পানি’ কেমন অস্বাভাবিক ঠেকে। প্রথম পুরুষের কথনে পারভীন যখন বলে, ‘বৈধ পুরুষের নিচে যাওয়া ধারাচার্য হয়েও চিরকালের জন্যে না হয়ে গেলো যার – সে আমি’, তখন মনে হয় যেন লেখক জোর করে তাঁর কাহিনীতে নারীর যৌনতাকে প্রবিষ্ট করাচ্ছেন।
দুটি উপন্যাসে দুটি ভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে নারীর ‘হয়ে-ওঠা’র এমন বাস্তবঘনিষ্ঠ চিত্র বাংলা ভাষায় ছিল অচিন্তিতপূর্ব। একজন নারী কথাকারের বয়ানে সে-ভাষা শোনা বাঙালি যে-কোনো পাঠকের জন্যে অনাস্বাদিত এক অভিজ্ঞতা। পারিবারিক জীবনে অভ্যস্ত হয়েও পরিবারের অনেক না বলা কথা পুরুষ কথাকাররাও বলেননি, যেটি আকিমুন রহমান বলেছেন: পারভীনের ভাষ্যে ওর বাবা-মাকে যৌনসম্পর্কে আকস্মিক দেখে ফেলাকে বলিয়েছেন। মানসিক ভারসাম্যহীন ছোটভাই শাহ্ আলমের শারীরবৃত্তীয় অভিজ্ঞতার কথা বলিয়েছেন; যেমনভাবে যৌবন শুরুর কালে সহায়হীন নারীর যে-বিপর্যস্ত অবস্থা, তা আছে দুটি উপন্যাসেই। তবে ‘জীবনের রৌদ্রে উড়েছিলো কয়েকটি ধূলিকণা’য় লেখক উপস্থাপন করেছেন রুহীর বিপর্যয়ের কথা। রুহীরা ছয় বোন। ভাইয়ের প্রত্যাশাতেই সংখ্যাটি ছয়ে গিয়ে ঠেকেছে। আর প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার কারণেই রাজ্যের দুঃখ আর দুশ্চিন্তা রুহীর বাবার। রুহীর মাও নিন্দিত – পুত্রসন্তান তার গর্ভে তিনি ধারণ করতে পারেননি সেজন্যে। নিন্দাকারীরা সবাই রুহীর বাবার আত্মীয়স্বজন।
মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়ার জন্য রুহীর বিপর্যস্ত অবস্থাটি যদিও ‘পুরুষের পৃথিবীতে এক মেয়ে’র শামীমার চেয়ে কম পীড়াদায়ক এজন্যে যে, শামীমাকে স্থাপন করা হয়েছিলো ওর পুরুষ দুই সহোদর রতন- খোকনের সঙ্গে। আর তাই শৈশবেই শামীমা জেনে গিয়েছিল ‘আমার আর ওদের পৃথিবী দুটি ভিন্ন পৃথিবী। ওদের পৃথিবী যতœ পাওয়া আর সবকিছু করার অধিকারে ভরা। আমার পৃথিবী অযত্ন আর শাসানি তর্জনে ভরা।’ পুরুষ ও নারীশিশুর প্রতি পিতামাতাসহ সমাজের অন্যদের যে-বৈষম্যমূলক আচরণ, তার নির্মম কিন্তু সত্য এক বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে পুরুষের পৃথিবীতে এক মেয়ে উপন্যাসে। ছয় বোন আর মা-র পরিবারে
রুহীরা একদিন পেল এক উকিল নোটিশ। পরিবারের সবার নামে। কেস করা হয়েছে ওদের বিরুদ্ধে, শিবগঞ্জ সাবজজ আদালতে। আবেদনকারী রুহীদের চাচাতো ভাইয়েরা। ডাকযোগে এই উকিল নোটিশ পাওয়া দিয়েই রুহীদের কাহিনীর উন্মোচন।
‘জীবনের রৌদ্রে উড়েছিলো কয়েকটি ধূলিকণা’র সঙ্গে আকিমুন রহমানের পূর্ববর্তী দুটি উপন্যাসের সামগ্রিকতার প্রশ্নে একটি পার্থক্য সূচিত – রুহীর কাহিনী প্রকৃতপক্ষে রুহীদের কাহিনীতে রূপান্তরিত আর শামীমা এবং পারভীনের কাহিনী বিস্তৃত পরিমণ্ডলকে আশ্রয় করেও শুধুমাত্র শামীমা বা পারভীনের কাহিনীতেই পরিণতি লাভ করেছে। রুহী উপন্যাসের কথক হলেও সে যেন আসলে নিজের কথা বলছে না; বলছে ছয়জনের কথা – যে-ছয়জনের সকলেই রুহীর মতোই নারীগোত্রের। পিতৃহীন এই ছয় ভগিনীর অসহায়ত্বের বিলাপ এমন:
আমরা ছয়জন, কিন্তু আব্বা তো নাই- আব্বা তো নাই- ক্যামনে কী হবে- কী করবো- কোথায় যাবো- আব্বা যে নাই- কে পথ দেখায়ে দেবে- আমি হাউমাউ কাঁদতে থাকি ঘরে ঢুকেই- কান্না সামলাতে পারি না যে- রুবি ফুঁপিয়ে ওঠে- কী হইছে- কী মেজো আপা- বেবী ঝাঁপিয়ে পড়ে দুবোনকে জড়িয়ে ধরে- কী হইছে… (পৃ ১০৪)।
উপন্যাসের কথক রুহী হলেও রুহীর ব্যক্তিগত ঘটনাগুলোও যেন রুহী-রুবী-বেবী-বাবলি-খুকু-ইতির ঘটনা। মামলা দিয়েছে ওদের চাচাতো ভাই শফিক-রফিকরা। রুহীরা নারী হয়েও শিক্ষালাভ করেছে প্রত্যাশিত পরিমাণে। আর শফিক-রফিকরা কিছুই অর্জন না করেও লাভ করতে চলেছিল ওদের সম্পত্তির অংশ। ধর্মীয় বিধান-অনুযায়ী পুত্র না থাকলে সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ কন্যারা পাবে আর বাকিটা পাবে মালিকের ভাই। মৃত্যুকালে কন্যাদেরকে তাদের বৈধ সম্পত্তির পূর্ণ অধিকার পাওয়ার প্রয়োজনেই রুহীদের বাবা বিশেষ আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। সে-ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করেই শফিক-রফিকরা কেস করে। কেস খেয়েই বিপন্ন ছয়বোনের যেন আহাজারি; সে-আহাজারির ফাঁকে ফাঁকেই উঠে এসেছে রুহীর কৈশোরের কথা- যে-কৈশোরে ওর সঙ্গে পত্র-বন্ধুত্ব হয়েছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া এক যুবকের, যে-যুবকের পত্র রুহীর প্রাণে সৃষ্টি করেছিল নতুন এক কাঁপন ইত্যাদি।
উপন্যাসের রুহী শিক্ষাজীবনে মেধার পরিচয় দিতে পেরেছিল বলেই বাবা তার লেখাপড়া বন্ধ করেননি। মেয়ে হয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ ডিগ্রি তার হয়েছে। যদিও তার হয়নি একটি চাকরি। চাকরি তার না হলেও দ্বিতীয় বোন রুবির কিন্তু হয়েছিল। আর এভাবেই সব বোন মিলে ওরা যেন একটি যুথ। যদিও জীবনের রৌদ্রে উড়েছিলো কয়েকটি ধূলিকণা ইতিবাচকতার ভেতর দিয়ে শেষ হয়েছে এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই। রুহীদের ছয় বোনের যে-যুথশক্তি তার বিজয় কিন্তু ঔপন্যাসিক সুস্পষ্ট করেননি। বরং মনে হয় তাদের পরাজয়ই যেন নিশ্চিত হয়েছে। যে উকিলকে ওরা নিয়ে গিয়েছিল শিবগঞ্জ আদালতে, তাকে হুমকি দিয়েই বের করে দিয়েছে শফিক-রফিকদের উকিল। উপায়হীন সে-উকিলের সঙ্গে রুহী-রুবিও বেড়িয়ে এসেছে কোর্ট-প্রাঙ্গণ থেকে জীবন বাঁচানোর আশা নিয়ে। আশৈশব যে-রুহীরা লড়াই করে এসেছে, তাদের এ-অনিশ্চয়তার দায়ভার লেখকের ওপরই বর্তায়। মনে
হয়, যেন কাহিনীর ওপর পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তিনি সৃষ্টি করতে পারেননি। কাহিনী যেন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ঝুলে পড়েছে উপন্যাসের শেষে।
তবে স্বীকার করতেই হবে, ‘জীবনের রৌদ্রে উড়েছিলো কয়েকটি ধূলিকণা’ ঔপন্যাসিক আকিমুন রহমানের সাহিত্যিক-প্রচেষ্টায় নতুন এক বাঁক। প্রথম দুটি উপন্যাসে নারীর শারীরবৃত্তীয় ব্যাপারের রূপায়ণ পাঠকের কাছে পৌঁনঃপুনিক মনে হতে পারে সহজেই। বর্তমান আলোচকের বারংবার এমনটিই মনে হয়েছে যে, শামীমার কাহিনীর ভেতরেই সংযোজিত হতে পারত পারভীনের কাহিনীর সেসব অংশ, যেগুলো ‘পুরুষের পৃথিবীতে এক মেয়ে’তে নেই। হয়তো তাহলেই শামীমার কাহিনী লাভ করতে পারত অনেক বেশি পূর্ণাঙ্গতা। এবং দ্বিতীয় উপন্যাস পাঠকালে এমন আশঙ্কা স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল যে, ঔপন্যাসিক আকিমুন রহমান বোধকরি কোনো ঘেরাটোপে আটকে পড়ছেন – যে-টোপ থেকে বেরোনোর পথ তাঁর জানা নাই। কিন্তু ‘জীবনের রৌদ্রে উড়েছিলো কয়েকটি ধূলিকণা’ প্রমাণ করেছে আকিমুনের ভিন্ন প্রকাশকে। উপন্যাসটির একটি মধুর অংশ হলো রুহীর বাবা অসুস্থ হওয়া থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অংশটি। প্রায় চল্লিশ পৃষ্ঠার এ-অংশটিতে একজন পিতার প্রতি কন্যার যে-সহানুভূতিপূর্ণ চিত্র ফুটে উঠেছে, তা প্রশংসার। তবে বেশি প্রশংসা বোধহয় প্রাপ্য এই সময়টিতে অন্যান্য নিকটজনদের বিরূপ আচরণের চিত্রণে। স্ট্রোক অবস্থায় হাসপাতালে পড়ে থাকলেও তার যে-বোন এতদিন এত নৈকট্য দেখিয়েছে, কাছে এসে দাঁড়ানোর সময় পায় না সে। খবর দিয়ে আনতে হয় তাকে। তার নিজের স্ত্রীও সহ্য করতে নারাজ এ-অবস্থা। যেদিন আম্মাকে হাসপাতালে রেখে রুহীরা বাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিল, সেদিন ওরা ফিরে এসে দেখে:
আম্মার মুখ থমথমে, সেখানে রাগ নিরুপায় রাগ আর অনেক ধকল সহ্য করার ছাপ। আমারে হাতে ধইরা আইন্না এই শাস্তির মধ্যে ফালাইছস? আম্মা গলা চড়াতে গিয়েও নামিয়ে ফেলে আর কাঁদা শুরু করে – সারাদিন এই অচল রুগীর মোকের মইদ্দে খাওন ঢোকানোর লেইগা খাড়া হইয়া থাকোন – এই বয়সের মাইনষে নি পারে! কাঁদতে কাঁদতে আম্মা রাগে হিসহিসাতে থাকে, নাকি আমিও বিছনায় পইড়া যাই এই তগো মনবাঞ্ছা? সারাদিন অজু নাই গোছল নাই একটু কাইত হওনের উপায় নাই – আমারে এইর মইদ্দে আইন্না তরা ফালাইছস। (পৃ ১২৯)
নিজের স্ত্রী যেখানে এমন ত্যক্ত-বিরক্ত, সেখানে কন্যা কিন্তু পুরোপুরি বিপরীত অবস্থানে। প্রথম যেদিন থেরাপি দেওয়ার জন্য রোগীকে বিশেষ কক্ষে নেওয়া হয়; রুহী আব্বার পাশ থেকে সরেনি। ‘আব্বার কষ্ট লাগে যদি’ – মমতাপূর্ণ এই ভাবনায় দাঁড়িয়ে থাকে সে। ভয় হলেও সরে না। বারবার তার মনে হয় ‘আপদ বালাই যা কিছু আমার উপর আসুক – আব্বা ভালো হয়ে যাক – আব্বা ভালো হয়ে আসুক।’ পিতা-পুত্রী সম্পর্কে ব্যাপক পরিবর্তন আসে এ-সময়েই। যে-পিতা তার সন্তান শুধুমাত্র কন্যা হওয়ার কারণেই উষ্ণতা বোধ করেননি তাদের প্রতি, শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সময়ে উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের জন্য সম্পত্তি নিশ্চিত করতে – তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই। আকিমুন রহমান গবেষক, ছোটগল্পকার, শিশুসাহিত্যিক। গবেষক অভিধাটি এ-অধ্যাপকের জন্যে সবচেয়ে জুতসই মনে হলেও দেশের ব্যতিক্রমী ধারার
সৃজনশীল পাঠকগোষ্ঠীর কাছে তাঁর অস্তিত্বে – বিতর্কসৃষ্টিকারী প্রবন্ধগ্রন্থ ‘বিবি থেকে বেগম’ থেকেই এর শুরু। সেই মানসিক দার্ঢ্য তাঁর উপন্যাসেও স্পষ্ট।
1 Comments
Lutfun
অসাধারণ বিশ্লেষণ সুব্রত দা! মূল গল্প পড়া হয়নি আমার কিন্তু বিস্তারিত এই আলোচনা আমাকে বুঝতে সাহায্য
করেছে। আপনার তুলনা হয়না।